সুনামগঞ্জের নাদের বখত বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত

নিজস্ব প্রিতিনিধি:: সুনামগঞ্জের শহরের ঐতিহ্যবাহী বখত পরিবারের সবচেয়ে মিশুক ব্যক্তিটির নাম নাদের বখত। যে কারো সঙ্গে সহজেই মিশে যাওয়ার অসম্ভব ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। বন্ধুজনেরা তাঁর সঙ্গে সকলের মিশে যাওয়ার বিষয়টি নানা আড্ডায় বলে বেড়ান।

গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান গণিউল সালাদীনকে ৬৮৬৭ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। নাদের বখত নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৬ হাজার ৩৫২টি।

এদিকে কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের খবর শোনার পরই সদ্যপ্রয়াত মা ও বড় ভাই আয়ূব বখত জগলুলের কথা মনে করে কেঁদে ওঠেন। এসময় সমর্থক ও কর্মীরা তাঁকে জড়িয়ে ধরে তারাও কেঁদে ওঠেন। বিজয়ের উল্লাসের বদলে নাদের বখতের বাসভবনে হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অশ্রু নামে স্বজন ও কর্মীদের চোখে। এর মধ্যেই কর্মীদের অগোচরে মা ও বড় ভাইয়ের কবরস্থানে ছুটে আসেন নাদের বখত। জিয়ারতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সকালেও বাবা, ভাই ও মায়ের কবর জিয়ারত করেই তিনি ভোট দিয়ে পরিদর্শনে বের হন বলে তাঁর কর্মীরা জানিয়েছেন। তারা আরো জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে আবারও তাদের কবর জিয়ারত করে দোয়া করেন। সন্ধ্যায় কেন্দ্র ঘোষিত ফলাফল পাওয়ার পর সমর্থকরা যখন উল্লসিত তখন চুপি-চুপি তাদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে আবার চলে আসেন ভাই আয়ূব বখত জগলুলের কবরে। কেঁদে-কেটে দোয়া করে চোখের জলে ভাসেন তিনি।

এসময় তিনি বাবা হোসেন বখত, ভাই মনোয়ার বখত নেক, মা নূরজাহান বখতসহ পরিবারের সবারই কবর জিয়ারত করেন। তাঁকে কবর জিয়ারত করতে দেখে আশপাশের মানুষও দাঁড়িয়ে যান। এসময় এ হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নবনির্বাচিত মেয়র নাদের বখত তাঁর প্রয়াত ভাই আয়ূব বখত জগলুলের জন্য দোয়া করে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে অঙ্গীকার করেন। পাশাপাশি মেয়রের পদে থেকে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি তাঁর বড় ভাই মেয়র আয়ূব বখত জগলুল মারা যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বখত পরিবারের সন্তান নাদের বখতকে দলীয় প্রতীক নৌকা উপহার দেন। তাঁকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচারণায় নামেন। তিনি প্রচারণায় গিয়ে সাধারণ ভোটারদের জমিদার পরিবারের প্রতিনিধিদের বর্জনের আহ্বান জানান। ভোটের দিনও তিনি প্রতিটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দানের আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রয়াত মেয়র আয়ূব বখত জগলুল নূরুল হুদা মুকুটকে বিজয়ী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তাই নূরুল হুদা মুকুটও জগলুলের সেই ঋণ শোধ করতে তার কর্মীদের নিয়ে শুরু থেকেই আন্তরিক প্রচারণা চালান।

নাদেরকে বিজয়ী করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট, আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুস সামাদ ডন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে সৌমেন সেন গুপ্তসহ অনেকেই এসে প্রচারণা চালান। বিশেষ করে গত দুইদিনেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। প্রচারণায় এগিয়ে থাকা নৌকা আরো এগিয়ে যায়। ভোটের দিনও শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে নেতাকর্মীদের বিভেদ ভুলে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আমরা শুরু থেকেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের সকল বিভেদ ভুলে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। তার ফল আমরা পেয়েছি। আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এভাবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *