বাবুল ধরা ছোঁয়ার বাইরে: বিউটি হত্যাকান্ড

নিউজ ডেস্ক:: বখাটের উৎপাতে স্কুল ছেড়ে একটি কোম্পানিতে চাকুরি নিয়েছিল কিশোরী বিউটি আক্তার। কাজে যাওয়া-আসার পথে তাকে ফের উত্যক্ত করতে শুরু করে বাবুল মিয়া ও তার সহযোগীরা। অভিযোগ ওঠে, এই হয়রানির অভিযোগ করায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে একমাস আটকে রেখে বিউটি আক্তারকে ‘ধর্ষণ’ করে বাবুল। এই ঘটনায় মামলা করায় ফের বিউটিকে তুলে নিয়ে যায়। এবার ধর্ষণের পর খুন করে বিউটির লাশ হাওরে ফেলে দেওয়া হয়।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডোরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিউটি আক্তার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে। আর মূল অভিযুক্ত বাবুল মিয়া একই গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে। বাবুলের মা কলমচান ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। পুলিশ জানিয়েছে, মামলার মূল আসামি বাবুল মিয়াকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। তবে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রায় প্রতিদিন বিউটিকে উত্যক্ত করতো বখাটে বাবুল মিয়া। এ নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে বিউটির বাবা-মা বাবুলের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিচার চান। এতে বাবুল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এর জের ধরে গত ২১ জানুয়ারি বিউটিকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় বাবুল ও তার সহযোগীরা। এরপর অজ্ঞাত স্থানে একমাস আটকে রেখে বিউটিকে ধর্ষণ করে বাবুল।

পরে গত ২১ ফেব্রুয়ারি কৌশলে বিউটিকে তার বাড়িতে রেখে বাবুল পালিয়ে যায়। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর গত ১ মার্চ বিউটির বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল ও তার মা ইউপি সদস্য কলমচানকে আসামি করে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। গত ৪ মার্চ আদালত শায়েস্তাগঞ্জ থানাকে এ মামলার আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।

সূত্র আরও জানায়, গত ১৬ মার্চ সায়েদ আলী বিউটিকে তার নানার বাড়ি লাখাই উপজেলার গুনিপুর গ্রামে পাঠিয়ে দেন। মামলা করায় ওই দিন রাতেই আবার বিউটি নিখোঁজ হয়। এরপর বিউটিকে ধর্ষণের পর খুন করে লাশ হাওরে ফেলে দেয়। পরদিন ১৭ মার্চ সকালে হাওরে বিউটির লাশ পাওয়া যায়। এর পরদিন সায়েদ আলী শায়েস্তাগঞ্জ থানায় বাবুলসহ দুজনের নাম উল্লেখ এবং আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যার পর ধর্ষণের অভিযোগে ফের মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, থানায় মামলা দায়েরের পর তারা বাবুলের মা কলমচান ও সন্দেহভাজন হিসেবে ঈসমাইল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। কিন্তু গা-ঢাকা দেওয়ায় বাবুলকে তারা গ্রেফতার করতে পারেনি।

এদিকে নিহত বিউটি হত্যাকান্ডের খবর সামাজিক যোগাযোম মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। অনেকেই ফেসবুকে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য করেছেন। এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেশের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করেছে।

নিহত বিউটির বাবা সায়েদ আলীর অভিযোগ, ‘বাবুলের যন্ত্রণায় আমার মেয়ে স্কুলে যেতে পারতো না। এ নিয়ে বিচার চাওয়ায় আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে একমাস আটকে রেখে সে ধর্ষণ করে। পরে মামলা করায় আবার তুলে নেয় এবং ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ হাওরে ফেলে দেয়।’

এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, ‘বিউটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল আসামি বাবুলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সে যেখানেই থাকুক, তাকে শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে।’

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *