নিজস্ব প্রতিনিধি:: বাহুবল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মিরপুর জামেয়া হোসাইনিয়া মাদ্রাসার বিতর্কিত মোহতামিম মাওলানা মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ এর ক্লাস রুমে শিক্ষার্থীদের দ্বারা প্রায় ৩ ঘন্টা অবরোদ্ধ থাকার পর অবশেষে বলৎকারের অভিযোগে বহিষ্কার হলেন। বিক্ষোদ্ধ এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গতকাল শনিবার বেলা ১টায় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যগনের সমন্বয়ে গঠিত সালিশ বৈঠকে বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
জানা যায়, ওই মাদ্রাসায় প্রায় ১১ বছর পূর্বে মোহতামিম হিসেবে যোগদান করেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নিতাইচক গ্রামের মৃত তারা মিয়ার পুত্র মাওলানা মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ। মোহতামিম হিসেবে যোগদান করলেও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মাদ্রাসা মসজিদের (বড় মসজিদের) ইমামের দায়িত্বও পালন করতে থাকেন তিনি। যোগদানের পর পরই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে শিক্ষার্থী বলৎকারের। তখন পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মসজিদে তার ইমামতি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তারপরও রহস্যজনক-অজ্ঞাত কারণে অক্ষত থাকে মোহতামিমের দায়িত্ব। গত প্রায় ২ বছর পূর্বে মাদ্রাসার প্রায় ৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এক পর্যায়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়। পরে তিনি আত্মসাৎকৃত আড়াই লাখ টাকা ফিরিয়ে দিয়ে রেহাই পান।
গত প্রায় এক মাস পূর্বে আবারও এক শিক্ষার্থীকে বলৎকার করেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হবার পর ক্লাস বর্জন করে এর প্রতিবাদ করে বিক্ষোদ্ধ শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মাদ্রাসার শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ক কমিটি ‘মজলিসে ইলমী’। কিন্তু তিনি ছুটিতে যেতে শুরু করেন গড়ি-মসি, থেকে যান মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে। তখন অন্যান্য স্টাফরা তাকে ক্লাস রুমে না যেতে পরামর্শ দেন। কিন্তু গতকাল শনিবার সকালে তিনি একটি ক্লাসে প্রবেশ করলে আবারও বিক্ষোদ্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থী ও স্টাফরা। এক পর্যায়ে একটি রুমে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় মাদ্রাসার দুটি ফটক। বিষয়টি জানাজানি হবার পর ভীড় জমান এলাকার শত শত উৎসুক জনতা।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন বাহুবলের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম দ্বীন মাওলানা আব্দুল বারী আনসারী। উপস্থিত হন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও আটগ্রাম নেতা আলহাজ্ব আকাদ্দছ মিয়া বাবুল, বিশিষ্ট মুরুব্বি মোঃ জিতু মিয়া, বাহুবল কাসিমুল উলুম মাদ্রাসার নায়েবে মোহতামিম মাওলানা আজিজুর রহমান মানিক, দৌলতপুর আশরাফিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা আব্দুল হাইসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। পরে বেলা ১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, স্টাফ ও এলাকাবাসীর উত্থাপিত অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হওয়ায় মোহতামিম মাওলানা মোঃ আব্দুল ওয়াদুদকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন উপস্থিত এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।
অভিযোগের সত্যতার বিষয়টি স্বীকার করে মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘শরীয়ত বিরোধী খেদমতের অভিযোগে মোহতামিম সাহেবকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এটা বলৎকার নয়’।
এ বিষয়ে বাহুবল মডেল থানার ওসি মোঃ মাসুক আলী জানান, ঘটনা শুনার পর মিরপুরে টহলরত পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবং মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি নিজেরা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় পুলিশ সেখান থেকে ফিরে আসে। তিনি জানান, এ বিষয়ে কোন মামলা দায়ের হয়নি। মামলা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি সূত্র জানায়, মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আজ রবিবার মামলা দায়ের হতে পারে।-