সাংসদ কেয়া চৌধুরীর দানকৃত ভূমিতে, আঞ্চলিক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

মহান মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ তথা সিলেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ভাষা সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী। তার কাছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র (তারবার্তা) আসে। এ ঘোষণাপত্রসহ মুক্তিযুদ্ধের বহু স্মারক পড়ে রয়েছে হবিগঞ্জে। এগুলো সংগ্রহ করেন এমপি কেয়া চৌধুরী।
পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর কন্যা হবিগঞ্জ-সিলেট জেলার সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এগুলো সংরক্ষণের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতি দাবী জানান। এরই ফলে তার পিতা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর রেখে যাওয়া ভূমিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় “মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ভাষা সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী স্মৃতি পাঠাগার” নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

যারই ফলশ্রুতিতে হবিগঞ্জ শহরের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় কেয়া চৌধুরীর দেয়া ভূমিতে এ জাদুঘর নির্মাণ করার জন্য পরিদর্শনে আসে জাতীয় জাদুঘরের একটি টিম।
২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর রবিবার দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের কীপার আনজালুর রহমান, ডিসপ্লে অফিসার মোঃ ইলিয়াছ খান ও স্থাপত্য নকশাবিদ রেজাউর রহমান জায়গাটি পরিদর্শন করে মুগ্ধ হন।

সর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় দেশের তিন জেলায় ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে তিন বরণ্য ব্যক্তির নামে আঞ্চলিক জাদুঘর নির্মাণ করার। এরমধ্যে হবিগঞ্জে হবে “মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ভাষা সৈনিক কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী স্মৃতি পাঠাগার”।

এ সিদ্ধান্তের পর ২১ মার্চ বুধবার সকালে এ জাদুঘরের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংসদ, আইনজীবি, সাংবাদিক ও জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে এ কাজের উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক বীরমুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর সহধর্মিনী রোকেয়া চৌধুরী।

পরে এমপি কেয়া চৌধুরীর বাসভবনে এক অলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রোকেয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও এমপি কেয়া চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় জাদুঘরের প্রকল্প পরিচালক(উপ-সচিব) মোঃ আবদুল মজিদ, সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম, বীরপ্রতীক নূর উদ্দিন, কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আবুল হোসেন, মেঘনা রিভার্স ফোর্সের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান চৌধুরী, ভাষাসৈনিক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আফরোজ বখত, হবিঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজমান আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা রফিক, সাখাওয়াত হোসেন খান, জিল্লুর রহমান খান মামুন, অ্যাডভোকেট ফয়জুল বশীর চৌধুরী সুজন, জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব মোবাশের আলী খাদেম বাবু, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শোয়েব চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরী, প্রথমআলো জেলা প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান নিয়ন, এটিএন বাংলা জেলা প্রতিনিধি আব্দুল হালিম, বাহুবল মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি নূরুল ইসলাম নূর, সন্তান কমান্ড নেতা শামীমুর রহমান, সমাজসেবক শাহীন তালুকদার, মৃনাল কান্তি রায় মিনু, রনজিৎ কুমার পাল, শেখ আব্দুল হেকিম, শেখ সোহেল আহমেদ, সৈয়দ আবির মুরাদ, অলিউর রহমান তালুকদার প্রমূখ।

জাতীয় জাদুঘরের প্রকল্প পরিচালক(উপ-সচিব) মোঃ আবদুল মজিদ জানান, এখানে সাংসদ কেয়া চৌধুরীর দানকৃত পৌনে ২ শতক ভূমিতে আঞ্চলিক জাদুঘরের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, হবিগঞ্জে এ জাদুঘরটি হলে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মারক সংগ্রহ করা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত একটি জীপ গাড়ী, বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পত্রের মূল কপিসহ বহু স্মারক। তিনি আরও জানান, জাদুঘরটিতে থাকবে লাইব্রেরী, সেমিনার হল, কয়েকটি গ্যালারী।

এমপি কেয়া চৌধুরী জানান, তার পিতা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী কতৃক রেখে যাওয়া জমিতে আঞ্চলিক জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ সফল করতে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সাথে দেখা করলে তারা ইতিবাচক সাড়া দেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে জাতীয় জাদুঘরের এ টিমটি পরিদর্শনে এসে পিরোর্ট পেশ করে।

পর্যায়ক্রমে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ সাপেক্ষে এবার নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। এখানে যাদুঘর হলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস জানতে পারবে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *