সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেক্স:: শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কালিকোটা হাওরের হাওয়ার বাঁধের গোড়ায় এখন বৃহৎ আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে চরম হুমকির মুখে রয়েছে এই হাওরের বোরো ফসল।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, হাওয়ার বাঁধের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধের দুপাশে নেই স্লোপ। বাঁধে ফেলা হচ্ছে বালুমাটি। দেখা দিয়েছে বৃহৎ আকারের বেশক’টি ফাটল। তাছাড়া দেয়া হয়নি বাঁশের আড়ি। যার ফলে এখনই ধস নামছে। বৃষ্টি হলেই বাঁধ ধ্বসে যাবে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এদিকে কালিকোটা হাওরের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। বাঁধগুলোর মধ্যে রয়েছে হাওয়ার বাঁধ, সিংড়ার খাল, সোবছনইর খাল, হারিয়া বিলের খাল, গাতুয়ার খালসহ সাউদের কাড়া ও জিনারীর আগার। এরমধ্যে হাওয়ার বাঁধ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে সোবছনাইর খালের বাঁধটিও রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। মামুদনগর গ্রাম সংলগ্ন ১২১নং প্রকল্পের বাঁধটি অপ্রয়োজনীয় বলেছেন ওই গ্রামের বশির আহমেদসহ আরো অনেকই। তারা বলছেন, এখানে বাঁধের কোন প্রয়োজনই নেই। এখানে বাঁধ হওয়ায় ‘খাল কেটে কুমির’ ডেকে আনা হয়েছে। এই পিআইসি’র সভাপতি আতাউর রহমান জীবন। এলাকাবাসী বলেন, বর্ষায় নৌপথে যাতায়াতের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বাঁধটি।
অন্যদিকে কাশীপুর নয়া হাটির মধ্যে কোন প্রকল্পই গ্রহণ করা হয়নি। যেকারণে পানি এজায়গা দিয়েই হাওরে ঢুকবে বলে জানান এলাকাবাসী। সেখানেও কাজ শেষ হতে আরো সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে বলে জানাগেছে। এবাঁধটিও গত বছর ভেঙে যায় বলে জানাগেছে।
অপরদিকে জিরানি বাঁধে ১৫ মিটারের মতো একটি ফাঁকা জায়গা রয়েছে। এই বাঁধ এলাকার দুই পিআইসি’র সভাপতির মধ্যে ফাঁকা জায়গা ভরাট নিয়ে চলছে নানা টালবাহানা। কেউই এই ফাঁকা জায়গাটি ভরাট করছেন না। যেকারণে এই জায়গা দিয়ে কালিকোটা হাওরে পানি প্রবেশ করবে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়া শাল্লা উপজেলা সদর সংলগ্ন কলাকান্দি হতে শিবগাছ তলা পর্যন্ত কোনো প্রকল্পই দেয়া হয়নি। ফলে এই এলাকার ফসল অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বলেন, অন্যান্য বছর এখানে প্রকল্প দেয়া হতো। এবছর এখানে কোন প্রকল্প না দেয়ায় হাসপাতালের দক্ষিণ দিকের হাওরটি তলিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, একটি সিন্ডিকেট সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে এসও শমশের আলী বলেন, এখন আর কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। তবে কলাকান্দি হতে শিবগাছতলা পর্যন্ত কাজটি উঠিয়ে নেব। কাশীপুর ও জিনারীর আগারের প্রশ্নে আটগাঁও পরিদর্শনে যাবেন বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, শাল্লায় ৩৬ কোটি টাকা দিয়েও প্রয়োজনীয় জায়গায় প্রকল্প দেয়া হলো না কেনো-এমন প্রশ্ন করেন পাউবো’র শাখা কর্মকর্তা এসও শমশের আলীকে। পাশাপাশি তিনি ওই বাঁধে কাজ করার নির্দেশও দেন।
এদিকে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন শাল্লা উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ গত ১৪মার্চ বাঁধ পরিদর্শন করেন। সকালে উপজেলার আটগাঁও ইউপির কালিকোটা হাওরের বিভিন্ন বাঁধ পরিদর্শন করেন সংগঠনের একটি টিম। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পরিদর্শন করেন- ৪৯, ৪৭, ৪৬, ৪৫, ৪৪, ৪৩, ৪১, ৫৫, ৩৪ প্রকল্পসহ আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ। এখন পর্যন্ত কোনো বাঁধের কাজই সমাপ্ত করতে পারেননি পিআইসিরা। ওইসব বাঁধে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে নেতৃবৃন্দ দেখতে পান ফসলরক্ষা বাঁধে নানা অনিয়ম। গোড়া থেকে মাটি তোলা, প্রায় বাঁধে এখনই ফাটল, স্লোপ নেই ঠিক, লেভেলিং নেই ঠিক, করা হয়নি দুর্মুজ, লাগানো হয়নি ঘাস। বাঁধের কাজে নানা অনিয়ম ও নীতিমালা লঙ্ঘন করায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শঙ্কিত।
অন্যদিকে উদগল, ঘিলুটিয়া, মাদারিয়াসহ ছায়ার হাওর প্রকল্পের অধিকাংশ বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। দিনব্যাপী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হাওরের বিভিন্ন বাঁধ পরিদর্শন করেন। এসময় সংগঠনের উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস, যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন দাস, উপদেষ্টা আজমান গণি তালুকদার, কবি রবীন্দ্র চন্দ্র দাস, সদস্য সুধীর চন্দ্র সরকার, আসাদ মিয়া, সদস্য সচিব জয়ন্ত সেন, আটগাঁও ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক ছুরত আলী, যুগ্ম আহ্বায়ক কদম আলী, সদস্য আবুল বাশার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।