নিজস্ব প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে একটি ওরস অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ওরস আয়োজক ও তৌহিদী জনতা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এ নিয়ে যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অনাকাঙ্কিত ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
তবে সরেজমিন এলাকাবাসি ও ওরসের আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, প্রায় ৪০ বছর আগ থেকে এখানে প্রতি বছর ওরস হয়ে আসছে। আয়োজনকারীর একজন এম ডি আনহার তালুকদার জানান, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার শ্রীপুরের মৃত হযরত ইব্রাহিম শাহ নামের একজন সংগ্রামের আগেই ভাাটপাড়া এসে আস্তানা স্থাপন করেন।
এখানে তার কোন সন্তানাদি বা বংশধর নেই স্বীকার করে তিনি আরো জানান, আমার পিতা ও এলাকার আশেক-ভক্তকুল নিয়ে তিনি জীবিত থাকতেও ওরসের আয়োজন করা হত। ইব্রাহিম শাহ ২০০৪ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর পর আমার পিতা এটির দায়িত্ব পালন করছেন।
এখানে তার কোন মাজার নেই বলেন, তাহলে কেন ওরস করা হচ্ছে’-এমন প্রশ্নের জবাবে আনহার তালুকদার জানান, এলাকায় তার ভক্তবৃন্দ আছে, তাদের জন্যই মূলত এই ওরসের আয়োজন করা হয়। তিনি আরো জানান, ওরসে কোন ধরণের সমাজ-রাষ্ট্র ও ইসলাম বিরোধি কার্যকলাপ চলে না। আমরা শুধুমাত্র মিলাদ-মাহফিল ও জিকির-আজকার করি এবং শিরনি ও তাবাররুক বিতরণ করি। তার মতে, এই ওরস শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরণের বাঁধার সম্মুখিন হইনি, এ বছর পাশের গ্রামের কিছু মানুষ তা করতে বাঁধা দিচ্ছেন। এম ডি আনহার তালুকদার বলেন, আমরা এটি করতে পুরোপুরি প্রস্তুত আছি, তবে শুনেছি যে, প্রশাসন নাকি এখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
এদিকে ওরস বন্ধের জন্য এলাকার তৌহিদী জনতা আয়োজকদেরকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা তা মানতে রাজি হয়নি। অবস্থা বেগতিক দেখে এবার করে আগামিতে আর করবে না বলে শর্ত দেয়।
স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, তৌহিদী জনতা তাদের দেয়া শর্ত মানতে নারাজ হওয়ায় অবশেষে ওরস বন্ধের পক্ষের লোকজন ১৫ মার্চ বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে পরদিন ফযর পর্যন্ত ইসলাম বিরোধি কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি ভাটিপাড়া ইউনিয়ন শাখার ব্যানারে স্থানীয় চক্করের বাজারে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের ঘোষণা দেয়।
অন্যদিকে এ তাফসিরুল কোরআন মাহফিলকে সফল ও স্বার্থক করার লক্ষ্যে এলাকাবাসির সাথে বুধবার বাদ আছর ভাটিপাড়া বড় মসজিদে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান কাজী, দরগাহপুর মাদ্ররাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা জাকির হোসাইন, বড় মসজিদের ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আল হাসান, মাওলানা মুহিবুর রহমান, রুহুল আমিন তালুকদার, মোঃ মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা মুহিবুর রহমান, মাহমুদুল হাসান চৌধুরী সিরাজ ও ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
সভায় চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মুহাদ্দিস মাওলানা জাকির হোসাইনকে দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি ওরস বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের কাজ যেহেতু শরীয়ত পরিপন্থী, তাই আপনারা তা বন্ধ করুন। আর আমরা যেহেতু ভাল কাজ করতেছি, তাই আমাদের তাফসির অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
এ ব্যাপারে দিরাই থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোস্তফা কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পুরো ঘটনা অবগত হয়েছি। সম্ভবত সেখানে ১৪৪ ধারা জারিকরা হয়।
সর্বশেষ খবর পাওয়া অনুযায়ি দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অঃ দাঃ) মোঃ মাছুম বিল্লাহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে উপজেলা ভাটিপাড়াস্থ চক্করের বাজারের আশপাশে ৫০০ গজের মধ্যে কোন ধরণের সভা-মিছিল, মিটিং ও জনসভা নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন।