শোকাচ্ছন্ন রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ,তিনদিনের শোক ঘোষণা

নিউজ ডেক্স:: নেপালে ইউএস-বাংলার বিধ্বস্ত বিমানটির ৬৭ জন যাত্রীর মধ্যে ১৩ জনই ছিলেন সিলেটের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১০ জন মেয়ে ও তিনজন ছেলে। এরা সবাই মারা গেছেন।

সোমবার রাতে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের নেপালি ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায়, একজন আরেকজনের কাছে দুর্ঘটনার খবর নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দেশে ফোন করে হতাহতদের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। এ সময় অনেককে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায়। শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন অনেক সহপাঠী। তবে শোকাচ্ছন্ন নেপালি শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। নেপালি ছাত্রাবাসের এই শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো কলেজ ক্যাম্পাসে।

রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত শনিবারও ওদের সঙ্গে কথা হয়েছে। বলেছিলেন, রেজাল্ট বের হওয়ার পর এ হাসপাতালেই ইন্টার্ন করবেন। তারা বিধ্বস্ত হওয়া বিমানেই নেপাল গেছেন। আল্লাহ জানেন তাদের কী অবস্থা। কতজন মারা গেছেন এখনো সঠিকভাবে জানতে পারিনি। খুব খারাপ লাগছে। বলে বুঝানো যাবে না।

এ নিয়ে ফেসবুকে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মৈত্রেয়ী দেব লিখেছেন, ‘পরশু আঞ্জিলার সঙ্গে কথা হয়েছে। বলেছিল, এক্সাম শেষ, আশীর্বাদ করবেন ম্যাডাম। আমরা বাড়ি যাব। আমি বলেছিলাম, ডাক্তার হয়েই দেখা করিও কিন্তু।’

তিনি আরও লিখেন, ‘আমি (F2) ব্যাচের টিউটোরিয়াল টিচার ছিলাম। নিগা, আঞ্জিলা, প্রিন্সি ছিল আমার মেয়ের মত। শেষ ক্লাসের দিন আমাকে জড়িয়ে ধরে মেয়েগুলা কাঁদছিল। যখনই দেখা হতো হাসিমুখে জড়িয়ে ধরতো। বিমান দুর্ঘটনার খবর শুনে কি যে কষ্ট হচ্ছে বলে বুঝাতে পারবো না।’

বিধ্বস্ত বিমানে যাত্রী ছিলেন রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী- সঞ্জয় পৌডেল, সঞ্জয়া মহারজন, নেগা মহারজন, আঞ্জিলা শ্রেষ্ঠ, পূর্নিমা লোহানি, শ্রেতা থাপা, মিলি মহারজন, শর্মা শ্রেষ্ঠ, আলজিরা বারাল, চুরু বারাল, শামিরা বেনজারখার, আশ্রা শখিয়া ও প্রিঞ্চি ধনি।

কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একে দাউদ বলেন, আমাদের কলেজে আড়াই শতাধিক নেপালি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু শিক্ষার্থী রোববার এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা যার যার দেশে ছুটি কাটাতে গেছেন। দুর্ঘটনাকবলিত ইউএস-বাংলা বিমানে আমাদের ১৩ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে আমাদের মনের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা শোকাহত।

এ বিষয়ে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবেদ হোসাইন বলেন, বিমান দুর্ঘটনায় আমরা খুবই শোকাহত। এ মর্মান্তিক ঘটনায় কলেজে তিনদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।

তিনি জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার কলেজ বন্ধ থাকবে। কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হবে না এদিন। এছাড়া কলেজের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে, কালো পতাকা উত্তোলন, কালোব্যাজ ধারণ ও শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে।

১৯তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থীরা ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ছুটিতে নিজেদের দেশে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মাস দেড়েক পর এমবিবিএস ফাইনালের ফল ঘোষণার কথা রয়েছে তাদের।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *