অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে চা-বাগানের টিলা, ছবি তুলতে সাংবাদিকদের বাধা

নিউজ ডেক্স:: আলোচিত ব্যবসায়ী রাগীব আলীর বিরুদ্ধে এবার অবৈধভাবে চা-বাগানের টিলা কাটার অভিযোগ উঠেছে। রাগীব আলীর মালিকানাধীন দেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা-বাগান মালনীছড়ায় কোনো অনুমতি ছাড়াই টিলা কাটা হচ্ছে। ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, মাটি অন্যত্র বিক্রির জন্য অবৈধভাবে এ টিলা কাটা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনে পাহাড়-টিলা কাটতে হলে আগে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। আর চা- বাগান ইজারার আইনে বাগানের ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে ইজারা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। এছাড়া সিলেটে পাহাড় টিলা কাটার ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। তবে এসব কিছু উপেক্ষা করে টিলা কাটছে মালনীছড়া চা-বাগান কর্তৃপক্ষ।

মালনীছড়া চা-বাগান বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করা দেশের প্রথম চা বাগান। ১৮৫৪ সালে এ বাগানে উৎপাদন শুরু হয়। স্বাধীনতার পর সরকারের কাছ থেকে বাগানটি ইজারা নেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী রাগীব আলী। যিনি সিলেটের আরেক চা-বাগান তারাপুর চা-বাগান প্রতারণা ও জালিয়াতি করে দখলের দুটি মামলায় নিম্ন আদালতে দণ্ডিত হয়েছেন। দুটি মামলায়ই উচ্চ আদালতে আপিল করে বর্তমানে জামিনে আছেন রাগীব আলী ও তার ছেলে।

সিলেট নগরের উপকণ্ঠ সিলেট-বিমানবন্দর সড়কের পাশে অবস্থান মালনীছড়া চা বাগানের। শনিবার সকালে ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের ভেতরে ৫০-৬০ ফুট উঁচু একটি টিলা কাটছেন কয়েকজন শ্রমিক। টিলার বেশকিছু অংশ ইতোমধ্যে কেটেফেলা হয়েছে। টিলা কাটার মাটি বাগানেরই ট্রাক্টরযোগে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

টিলা কাটার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বাগানের টিলাবাবু বাদল দেব। তিনিসহ শ্রমিকরা টিলার কাটার ছবি তুলতে সাংবাদিকদের বাধা দেন। সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মীদের আটকেও রাখেন।

স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, কেবল এই টিলা ছাড়াও চা-বাগানের ভেতরের আরো কয়েকটি টিলা বিভিন্ন সময় কাটা হয়েছে।

মালনীছড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক আজম আলী বলেন, যে টিলাটি কাটা হচ্ছে সেটিতে চা চাষ হয় না। এটি উৎপাদনের কোনো কাজে লাগছে না। তাছাড়া চা-বাগানের জন্য বাইরে থেকেও মাটি আনা সম্ভব নয়। তাই মাটির প্রয়োজন হলে আমরা ভেতরের টিলা থেকে মাটি নিয়ে থাকি। এবার সড়ক সংস্কারের জন্য টিলা থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে। এজন্য কারো অনুমতি নেওয়া হয়নি।

শনিবার টিলা কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান নগরীর বিমানবন্দর থানার উপ পরিদর্শক শ্রীকান্ত চন্দ্র দাশ। তিনি বলেন, চা-বাগানের ভেতরে টিলা কাটার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মামলা করলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাগান কর্তৃপক্ষ সড়ক সংস্কারের জন্য টিলা কাটার কথা বললেও স্থানীয় উত্তরকাছ ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. শামসুল ইসলাম বলেন, মাটি বিক্রির অসৎ উদ্দেশ্যে এই টিলা কাটা হচ্ছে। এ জন্য কারো অনুমতি নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম। তিনি বলেন, সিলেটে সব ধরনের পাহাড় টিলা কাটায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তা মানছে না। বরং প্রকাশ্যেই টিলা কাটছে। শনিবার টিলা কাটার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে আমাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর সিলেটের পরিচালক সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, মালনীছড়া চা-বাগানের টিলা কাটার কোনো খবর আমার জানা নেই। তারা টিলা কাটার জন্য কোনো অনুমিত নেয়নি। বিষয়টি আমি আজকেই খবর নিচ্ছি।

চা-বাগানের ইজারা প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান বলেন, চা-বাগানে টিলা কাটা হচ্ছে বলে শুনেছি। যেকোনো ভূমি ইজারা প্রদানের সময় শর্ত দেয়া হয় ভূমির শ্রেণির পরিবর্তন করতে হলে আগে ইজারা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু মালনীছড়া চা-বাগান কর্তৃপক্ষ টিলা কাটার বিষয়টি আমাদের জানায়নি।

তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নেয়ার জন্য সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *