চিরবিদায় প্রিয়ভাষিণী

নিউজ ডেক্স:: মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আর নেই। গতকাল দুপুর পৌনে ১টায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি তিন ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। খ্যাতিমান এই মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৩শে ফেব্রুয়ারি ৬১২ নম্বর কেবিনে নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলমের অধীনে ভর্তি হন তিনি।

একই সঙ্গে তার পায়ের সমস্যার কারণে অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক আমজাদ হোসেনও চিকিৎসা দিচ্ছিলেন তাকে। ৪ঠা মার্চ তার পায়ের ছোট একটি অপারেশনও হয়েছিল। গতকাল দুপুরে হঠাৎ তার কার্ডিওয়াক সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে নেন এবং ১২টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ল্যাবএইড হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (কর্পোরেট কমিউনিকেশন) সাইফুর রহমান লেনিন এই তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মৃত্যুতে নেমে আসে শোকের ছায়া। শিল্পী, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা হাসপাতালে ছুটে যান। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রিয়ভাষিণীর ছেলে কারুতিতাস সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও লিভার, কিডনি, ইউরিন ও থাইরয়েডের নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তার মা। তার উপর ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে নিজের বাসায় বাথরুমে পড়ে গোড়ালিতে চোট পান ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। পরে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা তাকে জানান, গোড়ালির একটি হাড় স্থানচ্যুত হয়েছে। অস্ত্রোপচারও হয়েছিলো। এরপর গত বছরের ২৩শে নভেম্বর লিভারজনিত সমস্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে হেপাটোলজি (লিভার) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের অধীনেও চিকিৎসা নেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। এ বিষয়ে ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও লিভার সমস্যা ছিল প্রিয়ভাষিণীর। বাসায় বাথরুমে পড়ে গিয়ে পাও ভেঙে যায়। এদিকে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর পারিবারিক সূত্র বলছে, তার এক ছেলে কাজী শাকের তুর্য্য অস্ট্রেলিয়া থাকেন। তুর্য্য আসলেই তাকে দাফন করা হবে। এজন্য তার মরদেহ বিএসএমএমইউ’র মরচুয়ারিতে রাখা হবে। ল্যাবএইড হাসপাতালে জাতীয় কবিতা উৎসবের সভাপতি কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ পরিবারের পক্ষে সাংবাদিকদের জানান, আগামী ৮ই মার্চ ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে মিরপুর বৃদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। ওই দিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তার মরদেহ সর্বস্তরের জনগণের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে দাফন করা হবে মিরপুরে। ১০ই মার্চ বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই মুক্তিযোদ্ধার জন্য নাগরিক শোকসভার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি খুলনায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের ১১ সন্তানের মধ্যে প্রিয়ভাষিণী সবার বড়। তার স্বামী আহসান উল্লাহ আহমেদ ছিলেন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা। তিনি খুলনার পাইওনিয়ার গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনা গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত এ নারীকে ২০১৬ সালে সরকার মুক্তিযোদ্ধার খেতাব দেন। এর আগে ২০১০ সালে তাকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত প্রিয়ভাষিণী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। মাঝে কিছুদিন স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি ইউএনডিপি, এফএও, কানাডিয়ান দূতাবাস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। তিনি ভাস্বর্য শিল্পের সঙ্গে জড়িত হয়ে সুনাম কুড়ান। ২০১৪ সালে একুশের বইমেলায় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘নিন্দিত নন্দন’ প্রকাশিত হয়।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *