নারী শ্রমিকরা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার

নিউজ ডেক্স:: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের প্রায় ১৩ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার৷ শারীরিক নির্যাতনের শিকার ২০ শতাংশ৷ মানসিক নির্যাতনের শিকার ৭১ শতাংশেরও বেশি৷ আর এই নির্যাতনকারীর ভূমিকায় শীর্ষে রয়েছেন সুপারভাইজাররা৷

‘এস্টেট অব রাইটস ইমপ্লিমেন্টেশন অব ওম্যান রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়াকার্স’ শিরোনামের এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে এ খবর জানিয়েছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।

অস্ট্রেলিয়ান ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের আর্থিক সহযোগিতায় ‘কর্মজীবী নারী’ নামে একটি সংগঠন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কেয়ারের সহায়তায় গবেষণাটি করে৷

বিভিন্ন ধরনের পোশাক কারখানার ১৫০ নারী শ্রমিকের মধ্যে গবেষণাটি পরিচালিত হয়৷ কর্মস্থলের পরিবেশ, চাকরির শর্ত ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য– গবেষণায় মূলত এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়৷ এতে নির্যাতনের পাশাপাশি অনেক অনিয়মের ঘটনাও উঠে এসেছে৷

গবেষণায় দেখা যায়, ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ নারী শ্রমিকের কোনো নিয়োগপত্র নেই৷ ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেই সার্ভিসবুক৷ তবে ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশের হাজিরা কার্ড আছে৷

শ্রম আইনের লঙ্ঘন করে ৫০ শতাংশকে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷ আর ৫০ শতাংশ ১০ ঘণ্টারও বেশি৷ ওভারটাইম করা বাধ্যতামূলক এবং তা দিনে দুই ঘণ্টারও বেশি৷ বিশ্রামের কোনো সুযোগ পান না ৭০ শতাংশ শ্রমিক৷ ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ সাপ্তাহিক ছুটি পান না৷ নারী শ্রমিকদের ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ মৌখিক হয়রানির শিকার হন৷ ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ শিকার হন মানসিক নির্যাতনের৷ ২০ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের কথা বলেছেন৷ আর যৌন নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হন ১২ দশমিক ৭ শতাংশ৷

আর এই নির্যাতনের ৫২ শতাংশের জন্য তারা দায়ী করেছেন পোশাক কারখানার সুপারভাইজারদের৷ নির্যাতনের শিকার ৩২ শতাংশই জানেন না এর বিরুদ্ধে কোথায় অভিযোগ করতে হবে৷

এ ছাড়া কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার ও বিশ্রামের জায়গা না থাকা, রাতে কাজের সময় নিরাপত্তা সংকটের কথাও উঠে এসেছে৷ ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ নারী বলেছেন, তাদের রাতের পালায় কাজ করতে হয়৷ উঠে এসেছে নারীদের কর্মস্থলে স্বাস্থ্য ও মেটার্নিটি সেবার অপ্রতুলতার কথা।

বাংলাদেশ সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের প্রধান নাজমা আক্তার ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘পোশাক কারখানায় যারা শ্রমিক, তাদের অধিকাংশই নারী৷ আর যারা সিদ্ধান্ত নেন, তারা পুরুষ৷ ফলে নারী শ্রমিকরা নানা ধরনের হয়রানি ও প্রতিকূল পরিবেশের মুখে পড়েন৷ আর নারীরা পোশাক কারখানায় নেতৃত্বের দিক দিয়ে অনেক দুর্বল৷ আরেকটি বিষয় হল- নারীকে পোশাক কারখানায় নারী হিসেবে নয়, সস্তা শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ আর সেই বিবেচনার কারণে নারীরা নানা ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন৷’ তিনি বলেন, ‘সচেতন হওয়া এবং নারী শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া ছাড়াও বৈষম্য ও নির্যাতন অবহেলা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই৷’

গবেষণাকারী ‘কর্মজীবী নারী’র শিরীন আখতার ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা গবেষণাটি করেছিলাম পোশাক কারখানায় নারীদের অবস্থা জানতে৷ আর তাতে আমরা যে ভয়াবহ তথ্য পেয়েছি, তাতে আমরা নিজেরাই বিস্মিত হয়েছি৷’

তিনি বলেন, ‘এটি মালিকদের মানসিকতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে৷ তারা নারী শ্রমিকদের কম মজুরিতে নিয়োগ করেন৷ আর তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়, তাদের যে কোনো উপায়ে অধিক কাজ আদায় করতে বলা হয়৷ ফলে নারীরা নির্যাতন, বৈষ্যম্যের শিকার হন৷ আর পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীরা বিকল্প কোনো কাজ জানেন না৷ তাই নানা নির্যাতনের শিকার হলেও তা প্রকাশ করেন না৷’

তিনি আরও বলেন, ‘নারী সুপারভাইজার নিয়োগ দিলেও কাজ হবে না৷ কারণ তারা তো মালিকের আদেশ বাস্তবায়ন করবে৷ প্রয়োজন মালিকদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন৷ আর ট্রেড ইউনিয়নকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই৷’

শিরিন আখতার বলেন, ‘আমরা ওই গবেষণার পর কিছু সুপারিশও করেছি৷ কিন্তু তা কেউ আমলে নিচ্ছে না৷’

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *