সুনামগঞ্জের এক স্কুল ছাত্র’কে ক্লাস থেকে ডেকে নিয়ে মারধর: তুই যত কানবে তত মাইর খাইবে

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক : সুনামগঞ্জের স্কুল ছাত্রকে  কথা কাটাকাটির জেরে এক স্কুলছাত্রের বিরুদ্ধে সহপাঠীকে বেধড়ক মারধরের একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

গত রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জ শহরের এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয় এবং সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদের মাঝামাঝি এলাকায়।  ভিডিওতে দেখা যায়, এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিপন-(যেহেতু শিশু, এজন্য ছদ্ম নাম) এক স্কুল ছাত্রের হাতে মোবাইল ফোন দিয়ে ‘ভিডিও হোক’ বলে একই বিদ্যালয়ের ছমরু ও শঙ্কুকে (ছদ্ম নাম) পেটাতে থাকে। পেঠানোর সময় শিপনের হাতে থাকা লোহার রডে চেইন লাগানো ছিল। ‘হাত তুল, কানলে (কাঁদলে) আরও মাইর খাইবে বলে পেটাতে থাকে তাদের। এক পর্যায়ে দুই শিক্ষার্থী ব্যাথার চোটে মাটিতে বসে পড়ে। মারধরের ঘটনায় মাটিতে পড়া রক্তও দেখায় ভিডিও ধারনকারীরা। 

এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সবার নজরে আসে। নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থী সুনামগঞ্জের এইচ.এম.পি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। সে শহরের নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা। আরেক নির্যাতিত শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা।  মারধরের সময় সঙ্গে সাথে থাকা অন্য সহপাঠীরাও তাকে সহযোগীতা ও ভিডিও করেছে। সঙ্গে থাকা কাউকেই মারপিট ঠেকাতে দেখা যায় নি।

ঘটনার সময় মারধরের ভিডিও করা অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া মোহাম্মদ আব্রাহাম বলেন, ফেরানোর চেষ্টা করেও পারি নি। পরে ভিডিও করতে চাইলে ওরাই মোবাইল হাত থেকে নিয়ে ভিডিও করতে থাকে। আব্রাহাম আরও বলেন, কোর্ট মসজিদের কাছে নির্যাতনের শিকার দুইজনকে নিয়ে যায় ওরা। প্রথম’জনকে দুইবার ঘুষি দেয়ার পর মুখ থেকে রক্ত বের হতে থাকে। আমরা চারজন ছিলাম সেখানে কিন্তু শিপনকে আমরা আটকাতে পারিনি। ক্লাসে কথা কাটাকাটির জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে।
মারধরের শিকার স্কুল শিক্ষার্থী জানায়, ক্লাসের কথা কাটাকাটির জের ধরে তার বন্ধুদের দিয়ে ডেকে নির্জন স্থানে নিয়ে যায় তাকে। এসময় তার সাথে আরো কয়েকজন ছিল। পরে লোহার দন্ডের সাথে চেইন বেঁধে শুরু হয় নির্যাতন।
নির্যাতনের শিকার ছমরু আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবারে ক্লাসে প্রবেশের সময় তর্কাতর্কি হয়েছিল। রবিবার ক্লাস শুরুর আগে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আমাকে সেখানে ডেকে নেয়। সেখানে যাওয়ার পর ঘুষি, লাথ ও চেইন দিয়ে মারধর শুরু হয়। এরা পাঁচজন ছিল, দুইজনে মারধর করেছে। তারা আমাকে বলেছিল, তুই যত কানবে (কাঁদবে) তত মাইর খাইবে। তাদের মারধরে আমার কোমর ও মেরুদ-ে প্রচ- ব্যাথা রয়েছে।
ছেলের উপর এমন অমানবিক নির্যাতনের সাথে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার চাইলেন মা খাফিয়া বেগম। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে যে মারধর করা হয়েছে, সেটা সে আমাদের বলেনি। ভিডিও দেখে আমরা জানতে পেরেছি, ভয় পেয়েছি।
নির্যাতনের শিকার শিশুর চাচা মহিম উদ্দিন রবিন বললেন, কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই (ছমরু’র বাবা) মারা গেছেন, আজ ৪০ দিন হয়েছে। ফেসবুকে ছেলেটাকে মারধরের ঘটনা দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ আজ আমাদের ডেকেছেন। দুপুরে ঘটনার সাথে জড়িতদের নিয়ে আবার বসবেন তারা, তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, সুষ্ঠু বিচার করবেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে উপযুক্ত বিচার না পেলে আইনের আশ্রয় নেব আমরা।

এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনছান মিঞা বলেন, এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা আমি জানতাম না, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও দেখে আমরা ঘটনাটি জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন। এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, লজ্জার বিষয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ (বুধবার) সকালে আমরা সকল শিক্ষদের নিয়ে সভা করেছি। যেসব শিক্ষার্থী এই ঘটনার সাথে জড়িত এবং যে শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে তাদের ও অভিভাবদের সাথে আমরা কথা বলেছি। বিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী যা করার দরকার আমরা করবো। পরবর্তিতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাত সাড়ে সাতটায় প্রধান শিক্ষক জানান, এই বিষয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি জড়িতদের টিসি দিয়ে বিদায় করার সুপারিশ করেছে। স্কুল পরিচালনা কমিটি বসে দ্রুত এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

 

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *