আতিকুর রহমান (নয়ন): সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় অংশ হলো তরুণ প্রজন্ম। তাদের উদ্যম, সৃজনশীলতা ও চিন্তার স্বাধীনতা একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে মুখ্য ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজকের তরুণ সমাজ নানা সংকটে জর্জরিত—বেকারত্ব, হতাশা, মাদকাসক্তি, সহিংসতা, ভুয়া গ্ল্যামার সংস্কৃতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব তাদের অনেককেই বিভ্রান্ত করছে। অনেক তরুণ তাদের জীবনের লক্ষ্য হারিয়ে ফেলছে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে তরুণদের পুনরায় মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে সামাজিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা হয়ে উঠেছে অপরিহার্য।
সামাজিক সংগঠনগুলো তরুণদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। এসব সংগঠন তরুণদের দলগতভাবে কাজ শেখায়, দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে, নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত করে এবং সমাজের সমস্যাগুলো সমাধানে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে। একজন তরুণ যখন কোনো সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন, তখন তিনি নিজের সময়কে অর্থবহ কাজে ব্যবহার করতে শেখেন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে, সামাজিক সচেতনতা গড়ে ওঠে এবং জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইতোমধ্যেই অনেক তরুণনির্ভর সামাজিক সংগঠন কাজ করছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ঝিকুট ফাউন্ডেশন, যারা দীর্ঘদিন ধরে সমাজের অগ্রগতির লক্ষ্যে কাজ করছে। শিক্ষা সহায়তা, বৃক্ষরোপণ, রক্তদান, পরিবেশ রক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ঝিকুট ফাউন্ডেশন তরুণদের যুক্ত করছে স্বেচ্ছাসেবার মহৎ এই ধারায়। এই অংশগ্রহণ তরুণদের জীবনে নতুন অর্থ এনে দিচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে, সমাজের উন্নয়নে তাদেরও কারণীয় আছে এবং সমাজের প্রতি তাদেরও দায় আছে।
এই ধরনের সংগঠনের কার্যক্রম শুধু উপকারভোগী মানুষদের জীবন বদলায় না, বরং অংশগ্রহণকারী তরুণদেরও মানসিক ও নৈতিক বিকাশ ঘটায়। তারা বুঝতে শেখে, জীবনের সার্থকতা শুধু ব্যক্তিগত অর্জনে নয়—বরং অন্যের কল্যাণে অবদান রাখাতেও নিহিত। সামাজিক সংগঠনে কাজের মাধ্যমে তারা সহযোগিতা, সহনশীলতা, নেতৃত্ব ও দায়িত্বশীলতার মতো মূল্যবোধের অনুশীলন করতে পারে, যা ভবিষ্যতে নাগরিক নেতৃত্ব গঠনে সহায়ক।
তবে তরুণদের সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত করতে হলে কেবল সংগঠন তৈরি করলেই হবে না—প্রয়োজন কার্যকর দিকনির্দেশনা ও সহায়ক পরিবেশ। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে তরুণদের এমন কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা রক্ষা পায়। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সামাজিক সংগঠনগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আজকের তরুণরাই আগামী দিনের নেতৃত্ব। তাদের যদি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ, সচেতন ও মানবিক হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে একটি দায়িত্বশীল প্রজন্মের হাতে দেশ নিরাপদ থাকবে। আর সেই অভিযাত্রায় ঝিকুট ফাউন্ডেশনের মতো সংগঠনগুলো তরুণদের জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা—যেখানে সেবাই হয়ে ওঠে জীবনের দর্শন, আর সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধই হয়ে ওঠে তাদের শক্তির মূল ভিত্তি।
লেখক: গণমাধ্যম গবেষক ও উন্নয়নকর্মী


