সবার প্রিয় আবুল মুহাম্মদের চির বিদায় – রেজওয়ান আহমদ

‎সবার প্রিয় আবুল মুহাম্মদ চির বিদায় নিলেন হঠাৎ করে। সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক শ্যামল সিলেটের বার্তা সম্পাদক, সমাজসেবক ও সংগঠক আবুল মুহাম্মদ আমাদের কাছ থেকে চির দিনের জন্য বিদায় নিয়েছেন সবাইকে কাঁদিয়ে। এই বিদায় যেন কেউ কাম্য করেনি তার কাছ থেকে। জন্ম নিলে মরিতে হবে এটাই সত্য। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু যেন সবাইকে অবাক করে। কারণ অল্প বয়সে মৃত্যু আর বয়স্ক হলে মৃত্যু এই দুটি মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বয়স্ক হলে মৃত্যু হলে সবাই মেনে নেয়। কিন্তু অল্প বয়সে মৃত্যুটা যেন মেনে নেওয়া যায়না। আবুল মুহাম্মদ ভাইয়ের মৃত্যুটাও মেনে নিতে যেন কষ্ট হচ্ছে। কারণ তার যে বয়স হয়েছিল সেই বয়সে মৃত্যুর জন্য কেউ প্রস্তুত থাকেনি। তার মৃত্যুর খবর শুনে সহকর্মীরা হতবাক হয়ে পড়েন। হঠাৎ করে মিডিয়া পাড়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
‎২১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ছিলাম ব্যস্ত, একটি প্রোগ্রাম থেকে এসে দুপুর ১টা ৪৫মিনিটে বন্দর পয়েন্টে ছিলাম। হঠাৎ করে মোবাইল ফোন বেজে উঠলো, হাতে নিয়ে রিসিভ করলাম অপর প্রান্ত থেকে সুমন বললো মামা আবুল মামার খবর পাইছো নি, আমি বললাম কিতা খবর। সে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো আবুল মামা মারা গেছেন। আমি বললাম কে বলেছে সে বললো আবুল মামার ছেলে সামি তার ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে, তার কথা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। কারণ আমার সাথে ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জিন্দাবাজার অনন্যা নেটে দেখা হয়, দূর থেকে আবুল ভাই এক হাত উপরে তুলে বললেন ভাই ভালা আছইন নি, আমি বললাম জি ভাই ভালা আছি। এ সময় তিনি বললেন, কক্সবাজারের যে আনন্দ করেছেন খুব ভালো হয়েছে। এই বলে সোহেল ভাই আইছেন নি বলে ভিতরে গিয়ে বসলেন, সুমনের সাথে কিছু সময় গল্প করে চলে গেলেন। আর আমার সাথে দেখা হয়নি। সাংবাদিক আবুল মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় প্রায় ২০ বছর ধরে। এমন হাসিখুশি মানুষ আমি কম দেখেছি। কারণ তিনি সবসময় দেখা হলে হাসি দিয়ে কথা বলতেন, যেকারো সাথে দেখা হলে প্রথমেই দূর থেকে হাত উপরে তুলে হাসি দিয়ে বলতেন ভাই বালা নি। যার জন্য সবাই আবুল ভাইয়ের কাছের মানুষ হয়ে যেতেনএ তিনি দুই তিন দিন পর পর অনন্যা নেটে আসতেন। এসেই সবার সাথে হাসি দিয়ে কথা বলে বলতেন চা খাই সবাই মিলে, সুমনকে বলতেন মামা চা অর্ডার দেও আমি টাকা দিচ্ছি। চা খাওয়ার পর সবার সাথে হাত মিলিয়ে চলে যেতেন শ্যামল সিলেটের অফিসে। আবুল ভাই শুধু একজন সাংবাদিক ছিলেন না তিনি সামাজিক সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সময় দেখেছি অসহায় মানুষের জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। আবুল মোহাম্মদ ভাই আমাকে কোন কাজে দরকার হলে সামিকে দিয়ে ফোন দেওয়াতেন, সামি হচ্ছে আবুল ভাইয়ের ছোট ছেলে। সামি ফোন দিয়ে বলতো চাচা আব্বু বলেছেন, ফোন দেওয়ার জন্য। আমি ফোন দিলে বলতেন রেজওয়ান ভাই একটি প্রোগ্রাম আছে আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন। আমি একটি ব্যাপার দেখেছি আবুল ভাইয়ের কাছে বয়সে ছোট-বড় সবাইকে আপনি করে সম্মোদন করতেন। আবুল ভাইয়ের ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ হতেন। তিনি সমাজের জন্য কাজ করেছেন, দেশের জন্য কাজ করেছেন এবং অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য কাজ করেছেন। তিনি সৎ ও আদর্শবান একজন মানুষ ছিলেন, যার জন্য আবুল ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে মিডিয়াপাড়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সহকর্মী ও এলাকার মানুষ থাকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন চোখের জল দিয়ে। হাজার হাজার মানুষে ছিলো তার জানাজায়। মরহুম আবুল ভাই আমাদের মাঝ থেকে চির বিদায় নিলেও তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন (আমিন)।
কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *