জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসুম ও সময়োপযোগি মানবিক সাংবাদিকতা…

ক্রিকেটার নাসুম আহমদ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য। তার শুভ কামনা থাকার কারন নাসুম আমার প্রতিবেশী ছিলো।

যদিও আমার জন্মস্থান সিলেট নগরীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ছিলো, আমি তা জানতাম না বা চিনতাম না।
আমি ও আমার বাল্যবন্ধুরা জালালাবাদ এর যেসব স্থানকে মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে খেলেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মাঠ হচ্ছে মরিলের মাঠ। ( সাবেক কাউন্সিলর মহিউদ্দিন আহমদ লোকমান ভাইয়ের পৈতৃক সম্পত্তি) সে মাঠে খেলাধুলার হাতে খড়ি নাসুম আহমেদের।
আমরা যখন খেলার মাঠ ছেড়ে, জীবন জীবিকার কঠিন বাস্তবতায় কাজে কর্মে ব্যস্ত হয়েছি, এলাকা ছাড়া হয়েছি, তার অনেক পরে নাসুমরা মাঠে যাওয়া শিখেছে।
এই মরিলের মাঠ ঐতিহাসিক মাঠে পরিনত হতে পারতো, সেটা হয়নি। সেটা এখন অতীত। এই মাঠে, জাতীয় দলের অনেক খেলোয়ার খেলেছেন বা খেলতে এসেছেন। তার মধ্যে আমার মনে আছে, ১৯৯৯ সালে বঙ্গবন্ধু কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে আমাদের দলের জন্য, যারা খেলেছেন, পরবর্তীতে জাতীয় দলের খেলোয়াড় হয়ে দেশে বিদেশে সুনাম অর্জন করেছেন তারা হলেন, রাজিন সালেহ, অলক কপালি, তাপস বৈশ্য ও বাবর আহমদ। তাদেরকে প্রতি ম্যাচে ৫০ টাকা করে সম্মানীর বিনিময়ে খেলতে এনেছিলাম। তখন তারা স্কুল লীগ শেষ করে, জেলা দলে খেলছেন বা সিলেট জেলা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলছেন।
তাদের পরে এই মাঠ থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন এনামুল জুনিয়র, তার বাসা ছিলো মজুমদারীতে। আমরা বরাবর স্বপ্ন দেখতাম জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার। বিশেষ করে আমার স্বপ্ন ছিল ফুটবল নিয়ে। আমাদের পাড়া থেকে( জালালাবাদ থেকে) আমরা দু চারজনকে নিয়ে বেশি আশাবাদী ছিলাম। একজন আমার বন্ধু রিয়াজউদ্দিন রাজন, স্কুলে রাজু নামে পরিচিত রাজন, রসময় স্কুলের ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন ছিল। আমাদের আশা ছিল রাজন একদিন জাতীয় দলে খেলবে। আর দ্বিতীয় আশা ছিল আমাদের স্নেহজন ছোট ভাই ফুয়াদকে নিয়ে। ফুয়াদ বন্ধু আব্দুল আহাদেরর ছোট ভাই। ফুয়াদ আব্দুল গফুর স্কুল দলের ক্যাপ্টেন ছিল। আরেকজন স্নেহজন মুক্তাদির আহমদ জুয়েল, সে প্রথম বিভাগ লীগ খেলতো।জুয়েল আমার স্কুলের মেধাবী সহপাঠি সুরুজা আক্তার মনির ছোট ভাই। রাজন তার অমনোযোগীতার কারণে সেই প্রতিযোগিতার দৌড় থেকে ছিটকে যায়, পরিবারের সিদ্ধান্তে ইতালি চলে যায়। আর ফুয়াদ উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যায় লন্ডনে। আর জুয়েল এখন ব্যবসায়ী।তাই এ পাড়া থেকে আর জাতীয় দলে খেলার আসা নিরাশাই রয়ে গেল। সম্ভবত ২০২১ সালের (আগে পরে হতে পারে) মধ্যে শুনলাম, নাসুম আহমদ আমাদের জালালাবাদ আবাসিক এলাকার সন্তান। তখন মনটা আনন্দে… আরো জানলাম যে, আমাদের আরেক বন্ধু আব্দুল গফুরের সম্পর্কে শ্যালক হয়। আরো অনেকের চেনাজানা জনের আত্মীয় হয়… কারণ নাসুমের নব্বই ভাগ আত্মীয় স্বজনের বসবাস আমাদের জালালাবাদে।
ছোটবেলা থেকেই নাসিম আহমদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। তারপরেও সে দারিদ্র্যতার সাথে সংগ্রাম করে, জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায় পুরা সিলেটবাসী গর্বিত হয়েছিল। নাসুমের জন্ম সিলেট হলেও তার পিতা মাতার জন্মভূমি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়।
নাসুমকে সুনামগঞ্জে সন্তান হিসেবে যখন সুনামগঞ্জবাসী গর্ব করছিলো তখন এই ক্রিকেটার মিডিয়ার এক সাক্ষাতকারে সুনামগঞ্জের কথা অস্বীকার করেন এবং সুনামগঞ্জবাসী কষ্ট…।
সে দাবি করে সে সিলেটের বাসিন্দা। সেদিন সুনামগঞ্জবাসীর উচ্ছ্বাসে নিমিষে শেষ হয়ে.যায়।

আজকে নাসুমের পিতার কর্ম নিয়ে, যমুনা টেলিভিশনের অসম্পূর্ণ বস্তুনিষ্ট হীন একটি রিপোর্ট দেখলাম। এই নিউজ সময়োপযোগি ও মানবিক হয়নি। এখানে অনেক জনের বক্তব্য নেওয়ার দরকার ছিল, সঠিক পরিবেশ পরিস্থিতি তুলে ধরা দরকার ছিল, রিপোর্টার সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
নাসুম আহমদ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগেই তার মা, মারা যায়। তার মা, মারা যাওয়ার পরে, তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বড় বিষয় হচ্ছে নাসুম আহমদের আপন মায়ের পেটের বোন,তার সাথেই থাকে। তার সৎ ভাই বোন বাবার সাথে বা সৎ মায়ের সংসারে থাকে। নাসুমের পিতার প্রতি রাগ বা অভিমান যেটাই থাকুক, সেই কারণে হয়তো বাবার প্রতি সে ততটুকু খেয়াল বা দায়িত্ব পালন করে না। তার পিতাও নাসুম থেকে তেমন একটা আশা করেন না। তাই তিনি আমাদের জালালাবাদ আবাসিক এলাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা, জেলা পরিষদ হাউজিং এস্টেটে চৌকিদার বা পাহারাদারের কাজ করেন। এই বিষয়টাকে আমরা ভালো লক্ষণ বা ভালো কাজ হিসেবে সম্মান না করে, যমুনা টেলিভিশন এই কাজটিকে ছোট করে দেখিয়েছেন। যা রিপোর্টারের শিক্ষার অভাব বুজা যায়। রিপোর্টারের বৈষম্যমূলক শিক্ষা অর্জন করেছেন বলে অনুমান. হয়। বিধায় সামাজিক বিভেদকে বড় মনে করে, কাজকে বড় না মনে করে, তাদের পিতা পুত্রের কাজের অবস্থানকে বড় মনে করে, পক্ষপাতিত্ব নিউজ করেছেন। যমুনা টিভির রিপোর্টারের প্রতি অনুরোধ বা তার অজ্ঞতা বলতে চাই না, সে আরো পড়াশোনা করে সাংবাদিকতা করুক। এমন এক সময় যমুনা টেলিভিশন যে নিউজটি করেছেন, সেটি একজন মানুষের মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। এ ধরনের ব্যক্তিগত খবর যে কারো মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যই যথেষ্ট। তার কারণ আজ পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, এশিয়া কাপ খেলার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছে। সে দলে নাসুম আহমদও সুযোগ পেয়েছেন। এই নিউজকে ভিত্তি করে, যদি নির্বাচক মন্ডলী। মানসিক চাপ বিবেচনা করে, নাসুম আহমদকে দলের একাদশে সুযোগ না দেয় অথবা দলের থেকে তার দেশের বাইরে যাওয়া বাদ দিয়ে দেয়, তাহলে এর দায়ভার পুরো যমুনা টিভির রিপোর্টারের উপরে পরে। আমাদের বর্তমান সাংবাদিকদের স্কুল সার্টিফিকেট আছে কিন্তু শিক্ষা নেই, মনুষ্যত্ব নেই, মানবিকতা নেই, কমনসেন্স যেটা বলে সেটাও নেই।
আর্থিক কারনে, নাসুম আহমদ শিক্ষা দীক্ষা থেকে দূরে ছিল, তার সামাজিক অবস্থানও খারাপ ছিল, তাই হয়তো তার কথাবার্তা, তার আচার-আচরণ যথেষ্ট শোভন নয়। তাই তাকে দোষ দেওয়া যায় না। এর দায় আমাদের সমাজের। এ দায় আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের।
আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড খেলোয়াড়দের, নির্বাচন করার পরে। তাদের আচার-আচরণ কথাবার্তার ধরন, এসব বিষয়ে মানসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
সর্বোপরি এই লেখাটি বড় হয়ে যাচ্ছে, তাই বেশি না লিখে, যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টারের প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনি আরও দায়িত্বশীল, সচেতন হয়ে, বস্তু নিষ্ঠু সাংবাদিকতা করার চেষ্টা করবেন।
আর নাসুম আহমদকে অনুরোধ করব, আপনি যে অবস্থানে যান, আপনার পিতাকে, আপনার সমাজকে, আপনার অতীতকে, আপনি কখনও অস্বীকার করতে পারবেন না। আপনি যত বড় খেলোয়াড় হন, তার আগে ভাল মানুষ হওয়ার অনুরোধ রইল।
সবশেষে বাংলাদেশ দলের জন্য, একরাশ শুভকামনা জানিয়ে এখানেই শেষ করছি।
আল্লাহ হাফেজ ।

সিলেট, ০৭|০৯|২০২৫ ইংরেজি।

লেখক: মোহাম্মদ বাদশা গাজী, কবি, সাংবাদিক ও সংগঠক।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *