৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদের বিষয়টি সত্য হলে উৎসব করতাম

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক : দ্বীপ জেলা ভোলায় ৫ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ থাকার তথ্য সঠিক নয় বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তরফে নতুন বার্তা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানকার বিভিন্ন গ্যাস ক্ষেত্রে ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের প্রমাণিত মজুদ রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সচিবালয়ে বলেছেন, ‘ভোলায় ৫ দশমিক ১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই তথ্যটা যদি সঠিক হত, তাহলে আজ আমরা উৎসব করতাম। তাহলে আমাদের গ্যাসের কোনো সংকট থাকত না। আমদানির প্রয়োজন হত না।

চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও রাশিয়ার জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে ভোলায় ৫ দশমিক ১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে তখন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছিলেন।

তবে কয়েকদিন না যেতেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস ও সংশয়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার এত বিপুল গ্যাস থাকার বিষয়টি নাকচ করা হয়।

এদিন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী সংস্থা বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম ও তামিমসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে পর্যালোচনায় বসেন।

মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর উপদেষ্টা বিষয়টি খোলাসা করেন। বলেন, এত বেশি গ্যাস পাওয়া গেলে তা সবার জন্য উৎসবের খোরাক যোগাত।

তিনি বলেন, যেই জায়গাটার কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমরা সাইসমিক সার্ভে ও ড্রিলিং শুরু করব। বুধবার একনেকে ৪টি কূপ খননের জন্য প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোয়েব বলেন, ভোলার চরফ্যাশনে কোনো সাইসমিক জরিপের ডাটা নেই। শাহবাজপুর, ভোলা ও ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে ২ দশমিক ৪৭ টিসিএফ (উত্তোলনযোগ্য ১.৪৩২ টিসিএফ) প্রমাণিত গ্যাস রিজার্ভ রয়েছে। ভোলা জেলার অন্তর্গত ৩টি (শাহবাজপুর, ভোলা ও ইলিশা) গ্যাসক্ষেত্রে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে।

ভোলায় বাপেক্স ও গ্যাজপ্রমের যৌথ পরিচালিত ভূকম্পন জরিপের ডাটা বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ভোলা জেলার দক্ষিণাংশে চরফ্যাশন এলাকায় ১০ শতাংশ সম্ভাব্যতা হিসেবে ২ দশমিক ৬৮৬ টিসিএফ এবং শাহবাজপুর, ভোলা ও ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র এলাকার নতুন জোনে ও গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যবর্তী স্থানে ১০ শতাংশ সম্ভাব্যতা হিসেবে ২ দশমিক ৪২৩ টিসিএফ অর্থাৎ মোট ৫ দশমিক ১০৯ টিসিএফ গ্যাস রিসোর্স হিসেবে থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে এসেছে।

 

তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ওই প্রাক্কলন নিশ্চিত করার জন্য ওই এলাকায় ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

‘ওই দুটি এলাকায় ১০ শতাংশ সম্ভাব্যতা বিবেচনায় মোট ৫ দশমিক ১০৯ টিসিএফ সম্ভাব্য রিসোর্সের কথা উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, যা প্রমাণিত মজুদ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, গ্যাসের মজুদ নির্ণয়ের জন্য প্রথমে ভূকম্পন জরিপ করা হয়। তারপর তথ্য উপাত্ত দেখে কোম্পানিগুলো ঠিক করে সবচেয়ে বেশি কোথায় সম্ভাবনা রয়েছে গ্যাসের। সেখানে তারা ড্রিল করে। ড্রিল করে যদি গ্যাস পাওয়া যায় তখন তারা এটাকে প্রমাণিত মজুদ হিসেবে ঘোষণা দেয়।

তিনি বলেন, প্রমাণিত কিংবা প্রভাবল না হলে আমরা কোনো গ্যাসের মজুদ হিসাবে আনি না। মজুদের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেটা মিস লিডিং। ভোলায় মোট গ্যাসের মজুদ ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।

বদরুল ইমাম বলেন, ভোলাতে যে ৫ টিসিএফ গ্যাসের কথা বলা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ ভুল। এটা রিসোর্স হতে পারে। মজুদ নয়, আপনি ড্রিলিং করে না পেলে মজুদ বলতে পারবেন না।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *