জৈন্তাপুরে ফারুক মেম্বারের নৃশংসতায় সপরিবারে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাহের আলী

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক : প্রথমে একঘরে, এরপর একে একে সাড়ে ৫ লাখ টাকা জরিমানা, ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনাকে হত্যাকা- সাজিয়ে মামলা দায়ের। এখন পালিয়ে সপরিবারে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অসহায় তাহের আলী।

পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এমন নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছেন জৈন্তাপুর উপজেলর চিকনাগুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক আহমদ। এ ব্যাপারে সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের উমনপুর গ্রামের তাহের আলীর স্ত্রী হাসিনা বেগম।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন আয়ানী। তার পরিবারের সদস্যরা আইনী প্রক্রিয়া মেনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করেন। তারা কোনো মামলাও করেন নি। পূর্ব শত্রুতার জেরে এই দুর্ঘটনাকে পূঁজি করে নানা অপতৎপরতা শুরু করেন চিকনাগুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. ফারুক আহমদ। তিনি তাহের আলী ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করেন। তিনি গোটা এলাকায় ছড়াতে থাকেন যে, মঈনুল হোসেনকে তাহের আলী ও তার সন্তানরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন! এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের জন্য চাপ সৃষ্টি করে ব্যর্থ হন। প্রভাবশালী এই ইউপি সদস্য তাহের আলীর একটি সো-মিল ও দুটি ফার্নিচারের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেন। গত ২১ জুন তিনি গ্রামবাসীকে নিয়ে এক বৈঠক করে তাহের আলীর পরিবারকে একঘরে ঘোষণা করেন। তাদের সাথে কথা বললে ৫০ হাজার ও সদাইপাতি বিক্রি করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান দেন।

এমন জুলুমবাজীর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবগত করেও কোনো সুফল পাইন নি তাহের আলীর পরিবারের সদস্যরা। তারা মামলা দায়ের করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন তারা। গত ৫ জুলাই ইউপি সদস্য ফারুক আবারও লোকজন নিয়ে বৈঠকে বসেন এবং তাহের আলীকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা জরিমানা দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। প্রভাবশালীদের চাপে ভয়ে তারা নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং বাকী টাকা সংগ্রহ করার সময় প্রার্থনা করেন। কিন্তু ফারুক মেম্বার ও তার লোকজন সময় দিতে রাজি হননি। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাহের আলীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর এবং মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেন। তারা গহনা এবং নগদ টাকা লুট করেন। তাদের হামলায় অন্তস্বত্ত্বাসহ ৭ নারী, ৭ শিশুসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এমনকি দুই বছরের একটা শিশুও তাদেও তাদের নৃশংসতার শিকার হয়। দার কোপে মারাত্মক আহত হয়ে এখনো মৃত্যুর সাথে সে পাঞ্জা লড়ছে।

হাছিনা বেগমের অভিযোগ, এ হামলার ঘটনায় বাড়িঘরের যে ক্ষতি হয়েছে, নগদ অর্থ গহনা এবং আসবাবপত্র ফ্রিজসহ- তার আর্থিক মূল্য অন্তত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ঘটনায় পরদিন ৬ জুলাই তাহের আলী বাদী হয়ে ফারুক মেম্বারকে ১নংসহ মোট ৩৪ জনকে অভিযুক্ত করে জৈন্তাপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (নং ০৩-০৬/০৭/২৪)। কিন্তু ১০/১১ দিন পেরিয়ে গেলেও জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ কোনো আসামী গ্রেফতার করেনি। এই সুযোগে ৩৪ জনের মধ্যে অন্তত ১৪ জন আসামী জামিন নিয়েছে। অন্যরাও জামিনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বহাল তবিয়তে গ্রামে কেবল ঘুরেই বেড়াচ্ছেনা, উল্টো বিভিন্ন মাধ্যমে নির্যাতন এমনকি হত্যার হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে।

এরপরও ফারুক মেম্বারের হিং¯্রতা কমেনি। গত ৭ জুলাই তিনি ১৩ জুন সড়ক দুঘটনায় নিহত মঈনুল হোসেন আয়ানীর ভাই নাজমুল হোসেইন এমদাদকে প্রভাবিত করে তাহের আলী ও তার সন্তান, ভাইসহ বাড়ির ৯জনকে আসামী দিয়ে সিলেটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চতুর্থ ও আমলী ৬নং আদালতে মিথ্যা অভিযোগে এক সাজানো হত্যামামলা (নং সিআর ১৫৮/২০২৪) দায়ের করিয়েছেন। এ মামলার খবরে অবর্ননীয় দুঃখ দুর্দশা নেমে আসে তাহের আলীর বাড়িতে। বাড়ির পুরুষরা সব পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর মহিলারা শিশুদের নিয়ে অসহায় অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কোনেমতে বেঁচে আছে। এ অবস্থায় তারা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নানের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর অগ্নি সংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং ইউপি সদস্য ফারুকের প্ররোচনায় নাজমুল হোসেইনের দায়ের করা সাজানো হত্যা মামলায় যাতে তারা পুলিশী নির্যাতনের শিকার না হন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে তাদের অসহায়ত্ব দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন হাছিনা বেগম।

এ ব্যাপারে জানতে ইউপি সদস্য ফারুক আহমদের মোবাইলে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

আর আসামী গ্রেফতার সম্পর্কে জৈন্তাপুর থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) তাজুল ইসলাম বলেন প্রতিদিনই অভিযান চলছে। কিন্তু আসামীরা সবাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অবশ্য ১৪ জন আদালত থেকে জামিনও পেয়েছে।

 

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *