“আসুন মাদক নয়, বন্ধুত্ব পরিবার গড়ে তুলি” মাদকের সুফল ও কুফল ইমতিয়াজ রহমান ইনু (পি.এ.এম.এস)

২৬ শে জুন আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতায় লিখেছেন, “একবার না পারিলে দেখ শতবার”। মেঘের আকাশে কালো হয়ে আসার কথা, কিন্তু রোদ্রের আলোয় আকাশ চমকে উঠল। তেমনি আমি সকালে ঘুম শেষে আমার কর্মস্থান আনসার ভিডিপি অফিসে আসার পথে চা খাওয়ার জন্য হোটেলে বসলাম। হঠাৎ আমার চোখে আসলে হোটেলের মালিককে। যেই মালিক এক সময় মাদকাসক্ত ছিলেন। অনেকবার তার পরিবারের সাথে কাউন্সিং করে কোন সাড়া পাইনি। পরিবারের সকলের একই কথা সে আর ভালো হবে না। সে অনেকবার ভালো হয়ে আবার মাদক নিয়েছে। কিন্তু আমি অনেক চেষ্টায় কয়েকবার মাদক নিরাময় পূর্ণবাসনে চিকিৎসা দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আবার সে মাদকাসক্ত হয়ে যায়। সে আজ সুস্থ হয়ে হোটেলের মালিক এবং তার কর্মস্থলে পাঁচ ছয়জন কর্মচারী তাহার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

মাদক পৃথিবীর সব দেশের সমস্যা। মাদক সেবন করার কারণে তরুণ যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। দিনে দিনে নতুন নতুন মাদক আবিষ্কার হচ্ছে। যা সকল দেশে মাদক নিয়ে যুবসমাজ ভুল পথে হাটছে যেমন তেমনি পরিবার, সমাজ, আত্মীয়স্বজন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যেমন, তেমনই মাদক আশক্ত তরুণ-তরুণী নিজের জীবন ধ্বংস করছে। যা পিতা-মাতা, ভাই-বোন, পরিবার চায় নি সমাজের কাছে ছোট হউক সন্তানের জন্য শহর, নগরে, ফুটপাতে অনেক তরুণ-তরুণী, ভালো ঘরের সন্তানরা যখন মাদকের টাকার জন্য চুরি, ছিনতাই এমনকি খুন-খারাপী করে। প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়। মাদক হচ্ছে এমন নেশা যে নেশা নিয়েছে বন্ধু-বান্ধব কিংবা কৌতুহলে  সে যেন সারাজীবনের জন্য নিজের সুন্দর জীবন নিজের ভুলে কারণে মৃত্যুর পথে আসলো, তেমনী সমাজ, পরিবার, আত্মীয় স্বজনের কাছে ঘৃণার পাত্র হলো। তেমনী অপরাধ জগতে ব্যক্তিদের খাতায় নাম লিখলো সে। পৃথিবীতে দেখা গেছে ১০০ জন মাদকাশক্তদের মধ্যে ৮০ জনই মাদক জীবন  থেকে ফিরে আসতে পারেনি। ২০ জন আলোর পথে এসেছে কি না তাও সন্ধয় আছে। মদ, গাজা, আফিন, হিরইন, ফেন্সিডিল, ইয়াবা, পেথিডিন, সহ নতুন নতুন নেশা নিচ্ছে ছেলে-মেয়ে ও শিশুরা। কেন নিচ্ছে? হতাশা বেকারত্ব, কৌতুহলে প্রিয়জনের অভিমানের কারণে, আনন্দ ও বহু কারণে। একজন ব্যক্তি মাদক যখন নেয়, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শারিরীক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

মাদকাসক্তদের চেনার উপায়-অনেক রাতে ঘরে ফেরা, নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধবী, টাকার চাহিদা, বিভিন্ন অযুহাতে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবন্ধব ও প্রতিবেশীর কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়া, নিরবে থাকা, কোন সময় বেশী কথা বলা, নোংরা কাপর পড়া, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ঘা, আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে থাকা, কোন সময় মাদকের টাকার জন্য নিজের শরীরের রক্ত বিক্রি করে থাকে, যার কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফুলে যায়। মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে হলে সমাজের সর্বোচ্চ মানুষ এগিয়ে আসতে হবে।

সচেতনতা প্রতিনিয়ত করতে হবে এবং মাদকের কুফল সম্পর্কে বলতে হবে। স্কুল কলেজে প্রতিনিয়ত পাঠ্য বইয়ে শিক্ষার্থীদের মাদকের কুফল সম্পর্কে ক্লাস নেওয়া, তরুণ যুবসমাজের কাউন্সিং পরামর্শ কেন্দ্র অধিকমাত্রায় সরকারী মেডিকেল কলেজে স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারে বন্ধুত্ব পরিবার গড়ে তুলতে হবে। বাইরোড সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালানে সবসময় সক্রিয় ভূমিকা প্রশাসনের সাথে স্থায়ী জনতা সহযোগীতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে পালন করতে হবে। মাদক মামলায় শূন্য ডলারেন্স করে মাদক পাচারকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদেরকে আইনের ফাঁকে ফুঁকে যেন কোনভাবে ছাড়া না পায়।

মাদকাসক্তদের আলোর পথে আনতে পরিবার ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকসক্তদের ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিতে হবে। একজন মাদকাসক্ত আমাদেরই সন্তান ও আপনজন। তাদের কাউন্সিং পূর্ণবাসন চিকিৎসা অতি জরুরী। প্রয়োজনে চিকিৎসা শেষে তাকে কর্ম ক্ষেত্রে রাখা জরুরী যেমন, তেমনী তাকে পরিবার পরিজনের বন্ধুত্ব মনোভাব তৈরি করা। পরিবারের সব বিষয় তার সাথে পরামর্শ ও তাহার ভালো দিকগুলো তাহাকে বলা। ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করা, বিনোদন, খেলাধুলা, গল্প, উপন্যাস, শিল্পচর্চা, তাহার সময়োপযোগী মনোভাব তৈরি করা। সন্দেহ কোন প্রকার থেকে তাকে বিরত রাখা। তাহার ভুল দেখলে সুলভ আচরণে বলা। নেশা নেওয়া সঙ্গী-সাথী ও বন্ধু থেকে দূরে রাখা। যেইসব এলাকায় মাদক বিক্রি হয়, সেসব এলাকা থেকে দূরে রাখা, তাহাকে টাকা পয়সা না দিয়ে তার প্রয়োজনী নৃত্যপ্রয়োজন কিনে দেওয়া, রাগ উত্তেজনায় কোন প্রকার কথা বলা যাবে না। নেশা নেওয়ার কারণে পরিবারের যে ক্ষতি করেছে তা কোন প্রকার বলা যাবে না। মাদক  সেবনকারীকে জেলে রাখলে সমস্যা সমাধান হয় না। তাদের বন্ধি অবস্থায় সুদ্ধাচার কাউন্সিং দিতে হবে। তাই বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা সুদ্ধাচার কাউন্সিং কেন্দ্র অত্যন্ত জরুরী। আসুন মাদক নয়, বন্ধুত্ব পরিবার গড়ে তুলি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *