নাসির আলী মামুনকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের সিলেটে প্রদর্শনী আগামি শুক্রবার

নাসির আলী মামুনকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী আগামি শুক্রবার ২৪ মে বিকেল ৬ টায় ঐতিহ্যবাহী সারদা হলে, সিলেট আর্ট কলেজ ও চলচ্চিত্র সংসদ সিলেফিলিয়ার যৌথ উদ্দোগে প্রদর্শীত হচ্ছে ।
এই প্রদর্শনীতে স্বনামধন্য আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন ও নির্মাতা মকবুল চৌধুরী উপস্থিত থাকবেন। পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফিতে এক অনন্য শৈলীর নির্মাতা আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, যিনি শিল্পাঙ্গনে ক্যামেরার কবি হিসেবেও ব্যাপক সমাদৃত। এবার তার জীবনের বর্ণাঢ্য অভিযাত্রা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। “নাসির আলী মামুন ইন প্রেইজ অফ শ্যাডোজ” (ছায়াবন্দনা)- শিরোনামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি নির্মাতা মকবুল চৌধুরী। কোলাকার প্রডাকশনের ব্যানারে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটিতে আবহ সংগীত পরিচালনা করেছেন ব্রিটিশ মিউজিক কম্পোজার জ্যাক বøুর।
৬২ মিনিট ব্যাপ্তির এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রোট্রেট ফটোগ্রাফির উন্নয়নে নাসির আলী মামুনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে  উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ দশক নাসির আলী মামুন সৃজনশীল এবং খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন দুর্লভ মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি করে চলেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক ছবি তোলার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর তোলা মাওলানা ভাসানী, কবি জসিম উদ্দীন, শিল্পী এস এম সুলতান, শিল্পী কামরুল হাসান, মাদার তেরেসা, লেস ওয়ালেসা, মিখাইল গরবাচেভ, ডেসমন্ড টুটু, বিল ক্লিনটনসহ অসংখ্য বিশ্ব বরেণ্য মানুষের ছবি ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রে তার সৃজনশীল কর্মকান্ডের নানা দিকের পরিস্ফুটন ঘটানো হয়েছে।
সত্তরের দশকে (১৯৭২ সালে) নাসির আলী মামুন বাংলাদেশে পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফির সূচনা করেন । তাঁর অনুসন্ধানী ক্যামেরায় বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রেষ্ঠ মানুষের দুর্লভ মুহূর্তগুলো বন্দী হয়ে আছে। আলোকচিত্রশিল্পে তিনি নতুন এক ঘরানার সূচনা করেন। এ পর্যন্ত প্রায় আট হাজার মানুষের লক্ষাধিক পোর্টেট ফটোগ্রাফি করেছেন তিনি। দেশে-বিদেশে তাঁর অর্ধশতাধিক একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে। কুড়িয়েছেন সুনাম এবং অর্জন করেছে খ্যাতি।

তার সাদা-কালো চিত্রগুলি আলো এবং ছায়ার একটি সুন্দর অথচ রহস্যময় এবং দ্ব্যর্থহীন সমন্বয় প্রদর্শন করে। বাংলাদেশের বহু বিখ্যাত ছবি তিনি ফ্রেমবন্দী করেছেন। তিনি তার শৈল্পিক জীবনে শিল্পকলা পদক, বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ, এম এ বেগ পদক, জীবনের জয়গান আজীবন সম্মাননা, ছবি মেলা আজীবন সম্মাননাসহ নানান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
চলচ্চিত্রটি নির্মাণ ও পপ্রদর্শনী প্রসঙ্গে নির্মাতা মকবুল চৌধুরী বলেন, “গত পাঁচ বছর ধরে এই ফিল্মটি নিয়ে কাজ করছি, অবশেষে গত ১০ মে ২০২৪ ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা অডিটোরিয়ামের প্রিমিয়ার শোতে উপচে পড়া দর্শকের যে ভালোলাগা সমর্থন এই চলচ্চিত্রটি পেয়েছে তা যে কোন নির্মাতার জন্য একটি প্রেরনার বিষয় । প্রামাণ্যচিত্রটি নাসির আলী মামুনের জীবন , কর্মপদ্ধতি ও তার কাজের উপর একটি বিশদ সৃষ্টি। তিনি এমন একজন ফটোগ্রাফার যিনি কিশোর বয়স থেকেই আমার আগ্রহকে ধরে রেখেছিলেন।  পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফিতে নিজের পরিচয়ের স্রষ্টা নাসির আলী মামুনের আলোকচিত্র যাত্রা একজন অক্লান্ত শিল্পীর শ্রম, সংগ্রাম ও ধ্যানের যাত্রা”

মকবুল চৌধুরীর জন্ম ও বড় হয়ে উঠা সিলেট শহরে। এরপর তিনি চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশনার জন্য ১৯৮৯ সালে ঢাকা গমন করেন । ১৯৯৫ সালে মকবুল চৌধুরী যুক্তরাজ্যে স্হায়ি ভাবে বসবাস শুরু করেন । মকবুল চৌধুরী নির্মিত  মুক্তিযুদ্ধে বিলেত প্রবাসি বাংলাদেশীদের অবদান ও সংগ্রাম নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি ফিল্ম “নট এ পেনি নট এ গান” বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি  ডকুমেন্টারি ফেস্টিভ্যাল ২০১৬-এ বেস্ট ডকুমেন্টারি ফিল্ম এওয়ার্ড অর্জন করে। এছাড়াও, নট এ পেনি নট এ গান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ন জয়ন্তি উপলক্ষে বম্বে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল প্রদর্শিত হয়েছে। ২০২৩ এ মকবুল চৌধুরী কমনওয়েলথ ক্রিয়েটিভ সিটি ট্যালেন্ট এওয়ার্ড লাভ করেন বারমিংহাম শহরে নতুন আগত ইরিত্রিয়ান ও ইথিওপিয়ান কমিউনিটিকে আশ্রয় করে নির্মিত চলচ্চিত্র “কফি বিনস গ্রোউ ইন মাই হেড” এর জন্য।

উল্লেখ্য, মকবুল চৌধুরীর “সাইক্লিস্ট অব ওয়ার” নামক একটি চলচ্চিত্র নির্মানাধীন রয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে স্ক্রিপ্ট ডেপলেপমেন্ট ফান্ড এয়ার্ড পেয়েছে।সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *