বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফশিল ঘোষণার পরপরই স্বাগত জানিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হয়েছে। গণতন্ত্রকামী বাঙালির জন্য আজকের দিনটি অত্যন্ত আনন্দের। আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। এর মাধ্যমে জনগণের পবিত্র ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। সব ভোটারকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদানের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ১৭ তারিখ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। একই সময়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শুরু করবেন। নির্বাচনের যে ট্রেন ছেড়ে গেল তা থামানোর ক্ষমতা বিএনপির নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আইন সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুল ইসলাম, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।
স্বাগত জানিয়েছে শরিক ও সমমনারাও : এদিকে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি তফশিলকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক এবং সমমনা বিভিন্ন দল। ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি তফশিলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সাংবিধানিক ধারাকে এগিয়ে নিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কমিশনকে সহায়তা করা।
১৪ দলীয় জোটের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান সমুন্নত থাকল, সংবিধানের প্রাধান্য সংরক্ষিত হলো, নির্বাচন বিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী ও সন্ত্রাসবাদী শক্তি পরাজিত হলো। তফশিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বের করে গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, তোপখানা, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলিপ বড়–য়া তফশিলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এর মধ্য দিয়ে সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দেশ নির্বাচনমুখী হলো। এছাড়া জাতীয় পার্টি-জেপি, তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি, ইসলামিক গণতান্ত্রিক দল এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) কমিশন ঘোষিত তফশিলকে স্বাগত জানিয়েছে।
রাজধানীতে আ.লীগের মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ : এদিকে তফশিলকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। তফশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে মিছিল করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডের মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিএনপির অবরোধের বিরুদ্ধে বুধবার সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান কর্মসূচি ছিল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তফশিলের পর মিছিল করার প্রস্তুতিও ছিল তাদের। ফলে সন্ধ্যার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীর উপস্থিতি আরও বাড়ে। তফশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মিছিল বের করেন তারা। এতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, সহসভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক চৌধুরী সাইফুন্নবী সাগর, দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজসহ মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নেতৃত্বে জাতীয় শ্রমিক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ নেতারা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সামনে মিছিল করে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদের নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মিছিল হয়। প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদসহ যুবলীগের আরও বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বিকাল থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে সেখানে মিছিল হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগও তফশিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে। সংগঠনের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের সামনে থেকে মিছিলটি বের করা হয়। সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির নেতৃত্বে ক্যান্টনমেন্ট থানার ইসিবি চত্বরে প্রায় এক হাজার নেতাকর্মীর মিছিল বের হয়। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মিজানুল ইসলাম মিজুসহ নগর ও থানা নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মিছিল হয় পল্লবীর রূপনগর এলাকায়। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসানের নেতৃত্বে উত্তরায় তফশিলকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মিরপুর-১২ নম্বর সিটি ক্লাবের সামনে থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়। স্থানীয় সংসদ-সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার নির্দেশে আনন্দ মিছিলে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। এছাড়া মিরপুর ১০ নম্বরে উত্তরের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পির নেতৃত্বে মিছিল করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্র্মীরা। নগর আওয়ামী লীগ নেতা মিজনুর রহমান মিজান ও এবিএম মাজাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে মিছিল হয় গাবতলী এলাকায়। এদিকে তফশিল ঘোষণার পরে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের নেতৃত্ব নবাবগঞ্জে আনন্দ মিছিল হয়েছে। এতে জেলা এবং থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে রাজধানীর ফার্মগেটে মিছিল বের করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ঢাকা-৫ আসনের সংসদ-সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর নেতৃত্বে সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী মোড়ে আনন্দ মিছিল বের হয়। এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের মিষ্টি খাইয়ে দেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের নেতৃত্বে ঢাকা-৫ আসনের আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে যাত্রাবাড়ী মোড়ে আনন্দ মিছিল হয়। যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্নার নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়। ঢাকা-৫ আসনের প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজলের নেতৃত্বে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল বের করেন।
ঢাকা-৪ নির্বাচনি এলাকার সাবেক সংসদ-সদস্য সানজিদা খানমের নেতৃত্বে জুরাইন বিক্রমপুর প্লাজার সামনে থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়। ড. আওলাদ হোসেন কদমতলী ও শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে জুরাইন থেকে আনন্দ মিছিল বের করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ড. মো. জগলুল কবিরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পোস্তগোলা ও দোলাইরপাড় থেকে আনন্দ মিছিল বের করে। এছাড়া তফশিলকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানীতে মিছিল করেছে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংগঠন।