ইমরান খানের চারপাশে শক্ত হচ্ছে ফাঁদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::  পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের নির্বাচনের জন্য পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ‘ভুল সিদ্ধান্তের কারণে’ পাকিস্তান এ মুহূর্তে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত।

ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের লোকদের দেখে মনে হচ্ছে ইমরান খান এবং তার পূর্ববর্তী সামরিক পরামর্শদাতাদের দ্বারা তৈরি করা একটি কাল্পনিক পৃথিবীতে বসবাস করছে, যেখানে ইমরান খানই তাদের একমাত্র ত্রাণকর্তা যিনি তাদের সব কষ্ট ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেবেন। আর শরিফ ও জারদারিদের দেশের লুটেরা দলের নেতা বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের জোট সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা, অযোগ্যতার পাশাপাশি ইমরান খান তার সরকারের আমলে অর্থনৈতিক ও ভূ-কৌশলগতভাবে যে জগাখিচুড়ি তৈরি করেছিলেন তা থেকে পাকিস্তানকে বের করে আনতে নীতি ও কৌশলের অভাব রয়েছে।

জেনারেল আসিম মুনিরের নেতৃত্বে পাকিস্তানের সামরিক সংস্থা ইমরান খানকে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত নয় এবং জেলে ভরো আন্দোলনের সময় পিটিআই নেতাকর্মীদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অপ্রত্যাশিত।

ইমরান খানের চারপাশে দিন দিন ফাঁদ শক্ত হচ্ছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন যে, ইমরান খানের আগের বার্তাগুলো সামাজিকমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হচ্ছে। এতে তিনি আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছেন।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থার দাবি, ইমরান খান জামান পার্ককে একটি দুর্গে রূপান্তরিত করেছেন; যেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। জামান পার্কের মধ্য দিয়ে যাওয়া লাহোরের মানুষের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমনকি পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদেরও ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের বিদেশে যোগাযোগ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে একটি চুক্তি করার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে নওয়াজ শরিফের আগামী পাক্ষিকের মধ্যে ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠছে।

৩০ এপ্রিল তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন হলে নওয়াজ শরিফ ফিরে আসবেন এবং নির্বাচন বিলম্বিত হলে নওয়াজ শরিফ লন্ডনে থাকবেন। আর এ কারণে মরিয়ম নওয়াজ ইতিমধ্যে ইমরান এবং তার পরামর্শদাতা ফয়েজ হামিদ, সাকিব নিসার এবং আসিফ সাইদ খোসার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেছেন।

পাকিস্তানি কলামিস্ট সেলিম সাফি তার একটি নিবন্ধে বর্তমান পাকিস্তান সরকারকে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) সরকার নয় বরং একটি দুর্ঘটনাজনিত সরকার বলে অভিহিত করেছেন। কারণ পাকিস্তান পিপলস পার্টি যেটি পিডিএমের প্রতিষ্ঠাতা দল ছিল তার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টিও এটি ছেড়েছিল যখন এমকিউএম এবং বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) দলগুলো সরকারের অংশ হওয়া সত্ত্বেও কখনো পিডিএমের উপাদান ছিল না।

সেলিম সাফি বলেন, পিডিএমের ঐক্য কার্যত শেষ হয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে গত এক বছরে পিডিএম দলগুলোর প্রধানদের কোনো বৈঠক না হওয়ার বিষয়কে উল্লেখ করেছেন। এমনকি অনেক দলের প্রধানরাও পিডিএম চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলছেন না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত যতদূর সবাই জানে যে জেইউজে (এফ) কার্যত খাইবার পাখতুনখোয়া শাসন করছে, যেখানে পিপিপি পাঞ্জাবের আধিপত্য করছে। শেহবাজ শরিফকে সব জোটের শরিকরা ব্ল্যাকমেইল করছে। তার মন্ত্রীরা তার কথা না শুনে নিজ নিজ দলের নেতাদের কথা শোনেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেহবাজ শরিফ এতটাই দুর্বল যে তিনি যখন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন, তখন মনে হয় যেন তিনি দলের কোনো নেতার সঙ্গে কথা বলছেন। একইভাবে সব জোটের শরিকরা আমলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের অংশ নিয়েছে। ফলে আমলারা প্রধানমন্ত্রীর দিকে না তাকিয়ে জোটের নেতাদের নির্দেশ মেনে চলেন।

তথ্যসূত্র: এএনআই

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *