স্পোর্টস ডেস্ক:: ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে ২০ বছরের তরুণ ইনজামাম যেভাবে পাকিস্তানকে ফাইনালে তুলেছিলেন, পেশোয়ারের ২১ বছর বয়সি মোহাম্মদ হারিস কি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে দিতে পারবেন পাকিস্তানকে? ভাবছেন— কোথায় ইনজামাম, আর কোথায় হারিস!
পাকিস্তান ক্রিকেটের সবসময়ের অন্যতম সেরা তারকা ইনজামাম। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম নামি ও সফল ব্যাটার। ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলিন ফরম্যাট টেস্টে ১১৯ ম্যাচে আট হাজার ৮২৯ রান করে ইনজামাম পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এই ফরম্যাটে তার অবস্থান ইউনুস খান (১১৮ টেস্টে ১০০৯৯) আর জাভেদ মিয়াঁদাদের (১১৯ টেস্টে ৮৮৩২) পরই।
ওয়ানডেতে তো আরও সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার। ৩৭৫ ম্যাচে ১১ হাজার ৭০১ রান করে ইনজামাম এই ফরম্যাটে পাকিস্তানের টপ স্কোরার।
সেই তুলনায় মোহাম্মদ হারিসের এখনো টেস্ট অভিষেকই হয়নি। সবে চারটি ওয়ানডে খেলেছেন। আর একটি মাত্র ম্যাচ (২২ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করাচিতে ১৩ বলে ৭) খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে। এক কথায় অনভিজ্ঞ। এমন এক আনকোরা তরুণের সঙ্গে ইনজামামের মতো কিংবদন্তির তুলনা করা কেন?
এটি বাড়াবাড়ি মনে হতেই পারে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তানের মধ্যকার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালের আগে ইনজামাম-উল-হকের প্রসঙ্গ ঠিক চলে আসছে।
কারণ এক ও অভিন্ন। ১৯৯২ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে টেনে তুলেছিলেন ইনজামাম-উল-হক। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের সেমির যুদ্ধে ২০ বছর বয়সি যুবকের উত্তাল উইলোবাজির (৩৭ বলে ৬০ রান) মুখে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল ড্যানি মরিসন, উইলি ওয়াটসন, গেভিন লারসেন, ক্রিস হ্যারিস আর দীপক প্যাটেলের সাজানো কিউই বোলিং।
আমির সোহেল, রমিজ রাজা, সেলিম মালিক, ইমরান খান, জাভেদ মিঁয়াদাদ, ওয়াসিম আকরাম, আকিব জাভেদ ও মঈন খানের মতো নামি তারকাদের পেছনে ফেলে পাকিস্তানের জয়ের রূপকার ও নায়ক বনে গিয়েছিলেন মুলতানের ইনজি।
৩০ বছর পর এবার ভিন্ন ফরম্যাটে আবারও সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সামনে পাকিস্তান। এবার সেমির যুদ্ধে পাকিস্তানিদের তুরুপের তাস হতে পারেন ২১ বছরের মোহাম্মদ হারিস।
এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা (১১ বলে ৩ ছক্কা ২ বাউন্ডারিতে ২৮) আর বাংলাদেশের বিপক্ষে (১৮ বলে ১ ছক্কা আর ৩ বাউন্ডারিতে ৩১) মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেছেন পেশোয়ারের এ তরুণ। তাতেই রেখেছেন প্রতিশ্রুতির ছাপ। প্রমাণ হয়েছে এ তরুণের বুকভরা সাহস। ডরভয় কম। হাত খুলে মারতে পারেন। উইকেটের সামনে ও দুদিকে আক্রমণাত্মক ‘বিগ শটস’ খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্যও আছে।
দুই ম্যাচে এরই মধ্যে চারটি ছক্কা বেরিয়ে এসেছে হারিসের ব্যাট থেকে। এমনকি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ইনিংস বড় করতে না পারা হারিস ৮ বলে ৭ রান করার পথেও এক ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। আর তাই ভাবা হচ্ছে— যে কোনো বোলিংয়ের বিপক্ষে বড় শট খেলার সামর্থ্য ও সাহস আছে এ ছোটখাটো গড়নের ব্যাটারের।
ক্রিকেট বোদ্ধারা বুধবারের ম্যাচে হারিসকে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের অন্যতম সম্ভাবনা বলে ভাবছেন। এ তরুণ আগের দুই ম্যাচেই হাত খুলে খেলতে খেলতে তিরিশের আশপাশে আউট হয়েছেন। বুধবার তার ব্যাট থেকে একটি উত্তাল ও বড় ইনিংস বেরিয়ে আসলে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, লকি ফার্গুসন, ইশ সোধি ও মিচেল স্যান্টনারের সাজানো কিউই বোলিং হয়ে যেতে পারে এলোমেলো।
হারিস কি সেটি পারবেন? দেখতে হালকা-পাতলা আর ছোট গড়নের মনে হলেও ‘ইয়া’ বড় বড় ছক্কা হাঁকাতে পারেন এ পেশোয়ারের তরুণ। কিন্তু বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য কি আছে? সে প্রশ্নও কিন্তু উঠছে।
কারণ ইতিহাস জানাচ্ছে, ১৯৯২-এর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সেমিফাইনাল জয়ের নায়ক হওয়ার আগেই ইনজামাম-উল-হক ওয়ানডেতে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড যাওয়ার আগে পাকিস্তানের মাটিতে সাত ওয়ানডেতে হয়ে শ্রীলংকার সঙ্গে পর পর দুটি সেঞ্চুরি এবং দুটি ৬০ ও ৪৮ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন।
হারিসের ওসব কিছুই নেই। চার ওয়ানডেতে তিন ইনিংস ব্যাট করে করেছেন মোটে ১০ রান। টি-টোয়েন্টিতে তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ ইনিংসটি ৩১ রানের। তবে টি-টোয়েন্টিতে যা সবচেয়ে বেশি দরকার, সেটি কিন্তু ঠিকই আছে হারিসের। এখন পর্যন্ত তিনি রান করেছেন ১৭৮.৩৭ স্ট্রাইকরেটে। ইনিংসটা বড় করতে পারলে এই স্ট্রাইকরেটে যে কোনো প্রতিপক্ষকেই দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারেন ২১ বছরের তরুণ।