খুনের পর খুন, ডাকাতি করে দশ বছর আত্মগোপনে ছিলেন আলকেস!

নিউজ ডেস্ক:: ২০১২ সালে রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয় বাসু নামে এক ব্যক্তি। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০২১ সালে ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ মামলার প্রধান আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলকেসকে (৫২) শুক্রবার বরিশাল শহর থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪ এর একটি দল।

জামিন নিয়ে প্রায় দশ বছর পলাতক ছিলেন আলকেস। বাসু হত্যার পর ঢাকার সাভার এলাকায় নিজের নাম ঠিকানা গোপন করে বসবাস শুরু করেন তিনি। তবে একস্থানে বেশিদিন থাকতেন না তিনি। কখনো বাসচালক, আবার কখনো দিনমজুরের কাজ করতেন। পরে ট্রলার ডাকাতিতেও জড়ান।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) মোজাম্মেল হক জানান, গ্রেফতার আলকেস মামলার বাদী চিনু মিয়া ও ভিকটিম বাসু মিয়া একই এলাকার বাসিন্দা। চিনু মিয়া ও বাসু মিয়া আপন ভাই। বিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ১৪ মে বিকাল ৫টার দিকে আলকেস, আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদর আলী, লেদুসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জন আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারাল অস্ত্র ও লোহার রড নিয়ে বাসু মিয়ার ওপর আক্রমণ করে।

‘একপর্যায়ে আলকেস তার কাছে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে বাসুর মাথায় লাগে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই চিনু মিয়া বাদী হয়ে আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে আসামি করে শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আলকেস। পরে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।’

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, মামলার তদন্ত শেষে ১৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। আদালত বিচারকার্য শেষে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আলকেস, আজগর আলী, খলিল, সেলিম ও রাজুকে মৃত্যুদণ্ড এবং আসামি কদর আলী ও লেদুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

এদিকে জামিনে থাকা অবস্থায় আলকেসদের সঙ্গে আজাহার ও সানুর মতবিরোধ হয়। সেই ক্ষোভ থেকে আলকেসদের হামলায় আজাহার ও সানু হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই ডাবল মার্ডারের মূল আসামিও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলকেস। ওই ঘটনায় আলকেসের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা আদালতে বিচারাধীন বলে জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক জানান, বাসু হত্যা মামলায় চার মাস হাজতবাস করে জামিন নিয়ে এলাকায় অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করেন আলকেস। বিরোধের জেরে বাসু হত্যা মামলার অপর আসামি আজাহার এবং সানু নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। সাভার থানা থেকে ওয়ারেন্ট জারির পর পালান আলকেস।

মোজাম্মেল হক জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং সংরক্ষণ করার অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা শাহ আলী থানায় মামলারও পলাতক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আলকেস। এছাড়াও তিনি শাহ আলী থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি। সব মামলার চাপে আত্মগোপনে চলে যান আলকেস। গত ১০ বছর ধরে আলকেস ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন।

‘আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজের নাম-পরিচয় ও পেশা বদলে ফেলেন। প্রথমে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি হত্যা, ডাকাতি করতেন। পরে বরিশাল গিয়ে ট্রাকের হেলপার ও পরে চালক হিসেবে কাজ করেন। বেপরোয়াভাবে বাস চালানের সময় সিলেটে তার বাসের নিচে পড়ে একজন নিহত হন। ওই ঘটনায় মামলা হলে তিনি পুনরায় পালিয়ে কুয়াকাটায় মাছ ধরার ট্রলারে কাজ শুরু করেন।’

জিজ্ঞাসাবাদে আলকেস মাছ ধরার পাশাপাশি সাগরে বিভিন্ন ট্রলারে ডাকাতি করতেন বলে স্বীকার করেছেন। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত আলকেস গত দেড় বছর একটি দূরপাল্লার পরিবহণের চালক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *