ঢাকায় দিনে বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৮২ কোটি টাকা

নিউজ ডেস্ক:: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর পরিবহণ খাতে ভাড়া নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। শুধু রাজধানীতেই যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। এ নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের হেনস্তা হতে হয়, বাস থেকে ফেলে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। পাশাপাশি বাড়ছে নিত্যপণ্যের মূল্য ও সামাজিক অপরাধ।

মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ৪র্থ যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিযোগ করেন।

সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত এক বছরে দুইবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বাড়ানো হয়। এতে গণপরিবহণ খাত অস্থির হয়ে উঠে। বর্তমানে নগরীর কোনো পরিবহণে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। এর প্রতিবাদ করায় তর্কের জেরে গণপরিবহণগুলোতে যাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। বাস থেকে ফেলে ১৪ যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। ২৫টি যাত্রী নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে।

গত ৫ আগস্ট থেকে ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানোর পর ঢাকায় বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয় প্রতি কিলোমিটারে আড়াই টাকা। এই টাকায় সর্বনিম্ন চার কিলোমিটার যাওয়ার কথা। কিন্তু এই চার কিলোমিটারের মধ্যে দুটি ওয়েবিলের চেক বসিয়ে আগে থেকেই সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করে ২০ টাকা আদায় করা হচ্ছিল। ভাড়া বাড়ার পর তা ১৫ করে ৩০ টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়। কোন পথের দূরত্ব কতটুকু- সেটি উল্লেখ করে যে চার্ট থাকার কথা, তার দেখা মিলছে না বাসে। কোনো বাস কোনো চেকে সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকাও রাখছে। এখন যাত্রী দুই কিলোমিটার যাক আর ছয় কিলোমিটার।

বাসে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে এভাবে বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চোখ বুজে থাকায় যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, তাদের করের টাকায় একটি অপদার্থ সংস্থা পালা হচ্ছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গণপরিবহণে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করতে সমিতির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহণ পর্যবেক্ষণ করে। যানবাহনের চালক, সহকারী ও ভাড়া আদায়কারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালিকের দৈনিক জমা, জ্বালানির উচ্চমূল্য, সড়কে চাঁদাবাজি, গাড়ির মেরামত খরচ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তারা এহেন ভাড়া নৈরাজ্য চালাতে বাধ্য হচ্ছে। রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকার বেশি অতিরিক্ত ভাড়ার নামে আদায় করছে গণপরিবহণগুলো।

বাড়তি ভাড়া আদায় ও নৈরাজ্য বন্ধে ১০টি দাবি জানিয়েছে সমিতি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায়, অভিজ্ঞ ও বুয়েটের কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ভাড়া নির্ধারণ, বাসের ভেতরে দৃশ্যমান স্থানে ডিজিটাল ব্যানারে ভাড়া চার্ট প্রদর্শন, সিটিং সার্ভিস-গেটলক সার্ভিস বন্ধ এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে একক মালিকানাধীন বাসে ২০ হাজার এবং কোম্পানির বাসে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আইনে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক লিটনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- সাংবাদিক মাসুদ কামাল, সড়ক পরিবহণ শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন, মানবাধিকার সংগঠক হানিফ ইসা, আতিকুর রহমান প্রমুখ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *