জাওয়াহিরি কেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন?

সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে চালানো একটি অভিযান সফল হয়েছে।

বিশ্বে আল কায়েদার নেতা হিসেবে পরিচিত জাওয়াহিরি। একজন অনমনীয় ও লড়াকু ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও তিনি বিশ্বজুড়ে আল কায়েদাকে শক্তভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। তবে তিনি হালও ছাড়েননি। তার নেতৃত্বে আরব বসন্ত থেকে এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বেশ কয়েকটি দেশে অস্থিতিশীল কিছু কর্মকাণ্ড চালিয়েছে আল কায়েদা।

জাওয়াহিরির উত্থান কয়েক দশক আগে। বিশ্ববাসী প্রথম তার নাম শুনেছিল ১৯৮১ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যার পর যখন তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন। সাদা পোশাক পরা জাওয়াহিরি চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘আমরা ত্যাগ স্বীকার করছি এবং ইসলামের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আরও ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত আছি।’

পরে আদালত জাওয়াহিরিকে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন এবং মূল অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

জাওয়াহিরি ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত সার্জন। তিন বছর কারাভোগ করার পর মুক্তি পেয়ে তিনি মিসর থেকে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে তিনি সোভিয়েত (তৎকালীন) বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত আফগানিস্তানে আহত ইসলামি মুজাহিদীন গেরিলাদের চিকিৎসার জন্য রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন।

ওই সময়েই বিন লাদেনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সৌদি ধনকুবের ও আল কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন তখন আফগানিস্তানে যুদ্ধ করছিলেন।

এর পর ১৯৯৩ সালে মিসরে ইসলামি জিহাদের নেতৃত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। তিনি মিসরের তৎকালীন সরকারকে উৎখাত করে বিশুদ্ধ ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নানা তৎপরতা শুরু করেন।

১৯৯৫ সালের জুনে আদ্দিস আবাবায় তার নেতৃত্বে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারককে হত্যাচেষ্টা হয়। শুধু তাই নয়, একই সময়ে তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মিসরীয় দূতাবাসে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেখানে জঙ্গিদের হামলায় ১৬ জন নিহত হয়েছিল।

১৯৯৯ সালে মিসরের আদালত জাওয়াহিরির অনুপস্থিতিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তত দিনে তিনি অবশ্য আল কায়েদার গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তার পর থেকেই জাওয়াহিরিকে খোঁজা হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে লুকিয়ে আছেন।

জাওয়াহিরি কেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন?

১১ সেপ্টেম্বরে হামলার জন্য আত্মঘাতী হামলাকারীদের তহবিল সংগ্রহ এবং কয়েক বছরের গোপন পরিকল্পনার পেছনে তিনি ছিলেন। জাওয়াহিরি নিশ্চিত করেছিলেন, আল-কায়েদা বিশ্বব্যাপী পুনরায় আক্রমণের জন্য প্রস্তুত আছে।

এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯/১১-এর পর, জাওয়াহিরি আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে পুনরায় আল-কায়েদার নেতৃত্ব গড়ে তোলেন। তিনি ইরাক, এশিয়া, ইয়েমেন এবং এর বাইরে অনেক শাখার সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন।

৯/১১-এর পর আল-কায়েদা বছরের পর থেকে বছরের পর বছর ধরে বালি, মোম্বাসা, রিয়াদ, জাকার্তা, ইস্তাম্বুল, মাদ্রিদ, লন্ডন এবং এর বাইরে অনেক জায়গায় আক্রমণ চালিয়েছিল। ২০০৫ সালে লন্ডনে ৫২ জন নিহত হওয়ার হামলা পশ্চিমে আল-কায়েদার সর্বশেষ বিধ্বংসী হামলার একটি। এসব কারণেই জাওয়াহিরি আল-কায়েদার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন এবং মার্কিন চিন্তার কারণ ছিলেন।

জাওয়াহিরি মাঝে মাঝে অনলাইন ভিডিও বক্তৃতার মাধ্যমে অনুসারীদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু তার মধ্যে বিন লাদেনের মতো ক্যারিশমাটিক গুণ ছিল না। তবে তিনি আল কায়েদার বেশ কয়েকটি বড় বড় হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র। সে হামলায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

কেনিয়া ও তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে ১৯৯৮ সালের বোমা হামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এফবিআইয়ে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ছিল জাওয়াহিরির নাম। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।

চলতি বছরে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কাবুলের একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়েছেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সময় রোববার তিনি তার বাড়ির বারান্দায় বের হলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ছোড়া ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হন।

সূত্র: এপি, বিবিসি ও ডয়চে ভেলে

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *