সায়েদাবাদে চরম ভোগান্তি, দ্বিগুণ ভাড়ায়ও মিলছে না বাস

নিউজ ডেস্ক:: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঘরমুখো যাত্রীরা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাড়ি ফিরতে কেউ কেউ ভোর থেকে বাস টার্মিনালে এসে বসে থেকেও বাসের দেখা পাননি।

কয়েকটি বাস ছেড়ে গেলেও যাত্রীদের দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, বাসমালিকরা বাস বন্ধ রেখে সংকট তৈরি করেছেন। থেমে থেমে ঘণ্টাখানেক পর বাস ছাড়লেও বাসের ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরের নির্ধারিত দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়ায় রাজি হতে হচ্ছে।

শুক্রবার রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেল।

ভোর ৬টা থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করা যাত্রীদের মধ্যে নারী ও শিশুদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

কুমিল্লার চান্দিনায় পরিবারে সঙ্গে গ্রামের বাড়ি যেতে ৫ বছর বয়সি আদিবা সকাল ৭ টায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। তীব্র গরমের মধ্যে বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পরে সে।

আদীবার মা জামিলা আক্তার জানান, আমার ছোট মেয়েটা নিয়ে সকাল থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু কোন বাসে এখনও উঠতে পারিনি। প্রতিটি বাস এক থেকে দেড় ঘন্টা পর ছাড়লেও তিনগুন ভাড়া নিচ্ছে। তারপরও বাস পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পরেছে। বাড়িতে যেতে পারবো কিনা তাও জানিনা।

আদিবার মতো ৬ বছরের ছোট্ট শাওনও বাবা মার সাথে গ্রামের বাড়ি রওনা হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৭ টায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসলেও খোলা আকাশের নিচে তীব্র গরমে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে সে।

কুমিল্লাগামী আরেক যাত্রী রতম আহমেদ জানান, এশিয়া লাইনের কয়েকটি বাস বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করতেই বাসের স্টাফরা তখন বলল বাস নষ্ট হয়ে গেছে। বাস যাবে না। যাত্রীরা যখন বাসগুলোর সামনে এসে উঠতে গেছে। তখন ভেতর থেকে বাসের হেলপার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কাউকে বাসে ওঠতে না দিয়ে বাসের হেলপার ভিতর থেকে বলল, যদি ৭০০ টাকা ভাড়া দেই তাহলে তারা বাস ছাড়বে। না হয় বাস ছাড়বে না। তাদের কাছে এখন আমরা সবাই জিম্মি। বাস বন্ধ করে আমাদের জিম্মি করে তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। এগুলো দেখার কেউ নেই।

সিলেটগামী আরেক যাত্রী আকাশ জানান, সিলেটে পরিবারের সাথে ঈদ করার জন্য সকালবেলা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসেছি। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে প্রায় তিনগুন ভাড়া দিয়ে তাজ কাউন্টার থেকে টিকেট কেটেছি। যেখানে সাড়ে ৪০০ টাকা ভাড়া অথচ এখন দিতে হচ্ছে ৯০০ টাকা ভাড়া আদায় করেছে। কেউ যদি তাদের নির্ধারিত ভাড়া দিতে রাজি না হয়। তখন বাস বন্ধ করে রাখা হয়।

ডিলাক্স গাড়ীর সুপারভাইজার বাপ্পী জানান, রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকার কারণে কুমিল্লায় যেতে এক একটি বাসের ৮ থেকে ১০ ঘন্টা সময় লাগে। আবার আসার সময় বাস খালি আসতে হয়। তাই আমরা সব হিসাব করেই ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছি।

এদিকে ট্রাফিক যাত্রাবাড়ী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আরিফুল ইসলাম মাসুদ জানান, আমরা গতকাল এবং গত পরশু দিনও বেশ কয়েকটা কাউন্টারে গিয়ে তাদের জরিমানা করেছি। বেশ কয়েকটা কাউন্টার বন্ধ করে দিয়েছি। এ ছাড়া আমরা বাসমালিকদের নিয়ে বসেছি। যাত্রীদের থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কেউ যেন বেশি ভাড়া আদায় না করে। সে ব্যাপারেও তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এমন কোনো অভিযোগ যদি আমরা পাই। তা হলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *