ফসলের মাঠ এখন রণভূমি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: যুদ্ধের প্রভাবটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ইউক্রেনসহ গোটা বিশ্ব। উৎপাদন বন্ধ, বিক্রিও বন্ধ। রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে দেশটির শত শত একর জমি এখন নিরেট যুদ্ধক্ষেত্র। ইউক্রেনের সোনার ছেলেরা এখন কৃষিকাজ বাদ দিয়ে কেউ যুদ্ধে, কেউবা মাথায় হাত দিয়ে পরিমাপ করছেন-আবার কবে বন্ধ হবে রাশিয়ার যুদ্ধ, কবে ফিরে পাবেন ফসলের খেত, কবে নামবেন বিশ্বের মানুষের খাদ্যশস্য ফলানোর যুদ্ধে। লিভিভের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রতিনিধি থমসন ফিরির এ কারণেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘ফসলের খেতগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত’ হওয়ায় বিশ্বব্যাপী ধেয়ে আসছে ক্ষুধা নামের দৈত্য। বিবিসি।

পুরো ইউক্রেনের ফসলের খেতগুলো প্রায়-পরিত্যক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরকম সমস্যায় ভুগছেন দেশটির কৃষকরা। গুদামে থাকা খাদ্যগুলোর চিন্তায় এখন তাদের মাথায় হাত। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় রপ্তানি আদেশ বাতিল করেছে কয়েকটি দেশ। দেশটির প্রধান বন্দরগুলো এখন অবরুদ্ধ। শস্য রপ্তানির জাহাজগুলোকে ছেড়ে যেতে হবে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে। কিন্তু সাগরের পানিতে গোপনে লুকিয়ে থাকা মাইনগুলোর ভয়ে ছাড়তে চায় না কোনো জাহাজই। রাশিয়ান সৈন্যরা ওডেসার পূর্বদিকে ২০০ কিলোমিটার (১২৫ মাইল) দূরে খেরসন শহর দখল করেছে। এ কারণে বন্দরের জলসীমায় ৩০টি রুশ যুদ্ধজাহাজ ওঁত পেতে আছে বলে মনে করা হয়। ফলে, গুদামেই শস্যগুলো পচে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় কৃষক।

তাদেরই একজন ৩৮ বছর বয়সি বরিস। পেশাগত নিরাপত্তার খাতিরে তার স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নিজের খামারটি চলমান রাখার জন্য ওডেসায় থেকে যান। তার শস্যগুদামটি তিনটি ফুটবল মাঠের সমান। সেখানে রয়েছে প্রায় এক হাজার টন কালো সূর্যমুখী বীজ। ইউক্রেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বীজতেল রপ্তানিকারক দেশ। কিন্তু এই মুহূর্তে বরিস তার ফসল বিক্রি করতে পারবেন না। কারণ, তিনি বলেছেন, ‘কৃষ্ণ সাগর বন্ধ এবং পণ্য বিক্রি করার কোনো উপায় নেই। বিক্রয়ের জন্য বিদ্যমান চ্যানেলগুলো দুর্ভাগ্যবশত খুব কম দামে কেনার প্রস্তাব দেয়।’ বরিস জানালেন, এই স্টকটি ১৮ মাসের মধ্যে বিক্রি না হলে এগুলো খামারেই পচে যাবে। এটাই নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস যে, যারা বিশ্বজুড়ে মানুষের খাদ্য সংকট মেটাতে দিনরাত পরিশ্রম করেছে-তাদের খাবার টেবিল ভরার জন্য নিজেরাই এখন সংগ্রাম করছে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *