বিদায়বেলায় ৬ বছর আগের সেই কষ্ট সামনে আনলেন হাফিজ

স্পোর্টস ডেস্ক :: বিতর্কের সমান্তরালে হাঁটে পাকিস্তান ক্রিকেট। যুগ যুগ ধরে সেটিই দেশে আসছে ক্রিকেটবিশ্ব। ক্রিকেট বোর্ড যেমন হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়। তেমনি প্রতিভাবান ক্রিকেটারদেরও বিতর্কে জড়াতে দেখা যায়।

ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো অপরাধে জড়িতে দেশটির বহু ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। সাবেক কিংবদন্তিদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধেও এ অভিযোগ রয়েছে।

তবে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ বরাবরই ক্রিকেটারদের দুর্নীতির বিষয়ে সোচ্চার। ফিক্সিংয়ে জড়িতদের খেলায় সুযোগ দেওয়ায় ক্যাম্প ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন হাফিজ। এ নিয়ে তাকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের রোষানলে পড়তে হয়েছিল।

বিদায়বেলায় সেই কষ্টের কথা সামনে এনেছেন মোহাম্মদ হাফিজ। ৪১ বছর বয়সি এই অলরাউন্ডার সোমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন।

ক্রিকেট পাকিস্তানের খবরে বলা হয়েছে— লাহোরে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ ঘোষণা দেন ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানার।  বিদায়বেলায় তার ঘটনাবহুল ক্যারিয়ারের নানা অর্জন, প্রাপ্তি ও তৃপ্তির কথা যেমন উঠে আসে অনেক, তেমনি তার কাছে জানতে চাওয়া হয় হতাশার অধ্যায়গুলো নিয়েও।

হাফিজ তখন ফিরে যান ৬ বছর আগের এক ঘটনায়।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরের আগে পাকিস্তানের ট্রেনিং ক্যাম্পের ঘটনা সেটি।  স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটানো জাতীয় দলের সিমার মোহাম্মদ আমিরকে ডাকা হয় ওই ক্যাম্পে। ম্যাচ ফিক্সারকে আবার সুযোগ দেওয়ার প্রতিবাদে তখন ক্যাম্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন হাফিজ এবং সেই সময়ের ওয়ানডে অধিনায়ক আজহার আলি।

হাফিজ বলেন, আমি এখনও ফিক্সারদের জাতীয় দলে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়ার বিরোধী।

‘আমি তখন এবং এখনও ফিক্সারদের বিপক্ষে। ফিক্সিংয়ে জড়িতদের দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়া হোক সেটি আমি কখনও চাইনি। কিন্তু তখন (হাফিজের ঘটনায়) পিসিবি চেয়ারম্যান আমাকে নিজের চরকায় তেল দিতে বলেন। তিনি বলেন, আমরা খেলতে না চাইলে সমস্যা নেই, কিন্তু সংশ্লিষ্ট ওই খেলোয়াড় খেলবে। এ কথা শুনে আমি বিমর্ষ হয়ে পড়ি।’

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরের আগে পাকিস্তানের ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে হাফিজ ও আজহারের সরে দাঁড়ানোর ঘটনা সেই সময় পাকিস্তানে তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেই তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। এর পর অবশ্য পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) বাধ্য করে দুজনকেই ক্যাম্পে যোগ দিতে। পরে তারা আমিরের সঙ্গে খেলেনও।
ক্যাম্পে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর সেই সময়ের পিসিবিপ্রধান শাহরিয়ার খান দেখা করেন হাফিজ ও আজহারের সঙ্গে। পরে সিদ্ধান্ত বদলে দুই ক্রিকেটারের ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা জানান শাহরিয়ার। সেই সময় তিনি বলেছিলেন— হাফিজ ও আজহারের অবস্থানের প্রতি সম্মান থাকলেও তাদের কিছু দাবি মানার মতো নয়।

তখন বোর্ডপ্রধানের কথা মানতে বাধ্য হলেও মন থেকে ফিক্সারদের যে এখনও মানতে পারেন না, বিদায়বেলায়ও তা স্পষ্ট করে বললেন হাফিজ।

ওই ঘটনায় হাফিজ খেলা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। হাফিজ জানান, এসব ঘটনায় ২০১৮ সালে একবার খেলা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু পরিবার তাতে সায় দেয়নি। তারা আরও কিছু দিন খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার প্রসঙ্গ তুলে হাফিজ বলেন, আমি ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অংশ হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটিও সম্ভব হচ্ছিল না। এসব কারণে আরও দুবার খেলা ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটি আর হয়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে পেরেছি। এখন আমার মনে হচ্ছে ক্রিকেটকে বিদায় বলার এটিই সবচেয়ে ভালো সময়।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *