আরপি নিউজের ৯ম বর্ষপূর্তিতে ‘জনপ্রত্যাশা পূরণে গণমাধ্যম ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা

আমিনুর রশীদ রুমান শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও বৈষম্যহীন উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে জনগণের নিরন্তর সহযোদ্ধা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আরপি নিউজের ৯ম বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হয়।

“এলাকায় এলাকায় মজবুত রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। যদি রাজনৈতিক সংগঠনকে শিক্ষিত করার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে এটা একটা কথার কথা থেকে যাবে। সংবাদপত্র ছাড়া এ শিক্ষার ব্যবস্থা কে করবে।”- মহান দার্শনিক ও রুশ বিপ্লবের মহানায়ক কমরেড ভি অাই লেনিনের উক্তিকে প্রতিপাদ্য করে এ উপলক্ষে সোমবার (২৫ অক্টোবর ২০২১) সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে ‘জনপ্রত্যাশা পূরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক অলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী বুলেট।

শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ ছায়েদ আহমদের সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাওছার ইকবাল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান মাসুকুর রহমান ও কবি জাবেদ ভূঁইয়া প্রমূখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী বুলেট বলেন, সংবাদের উপাদান উঠে আসে জনগণের কাছ থেকেই। জনগণ হলো সংবাদমাধ্যমের মূল। গণমাধ্যম জনগণের প্রত্যাশাই কোনো না কোনোভাবে পূরণ করে সম্পাদকীয় নীতির উপর। কিন্তু এখন অধিকাংশ গণমাধ্যম কর্পোরেট হাউস কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। আগে সাংবাদিকদের মূল্যায়ন ছিল, এখন সাংবাদিকতার মূল্যায়ন নেই।

সভাপতির বক্তব্যে আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যম যে ভূমিকা রেখেছে তা এক কথায় অতুলনীয়। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের প্রচারিত উজ্জীবনী গান, সংবাদ, কথিকা, সাক্ষাৎকার, আলোচনা অনুষ্ঠান, সংবাদ বিশ্লেষণ মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলার সাধারণ মানুষকে সাহস ও শক্তি যুগিয়েছে। মুক্তিপাগল মানুষের মনে মুক্তিচেতনার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করেছে। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, সংবাদবিশ্লেষণ, সম্পাদকীয়, উপম্পাদকীয় সাধারণ মানুষকে শুধুই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করে নি, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বাংলার দামাল ছেলেদের অনুপ্রাণিত করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের পথ-নির্দেশনা দিয়েছে, বিদেশিদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবল বিশ্বজনমত গঠন করেছে। দেশি গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিদেশি গণমাধ্যমও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য টাইমস, দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, দ্য স্টেটস ম্যান, ফিন্যানসিয়াল টাইম, বিবিসি, টাইম ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম মুক্তিযুদ্ধকে মুহূর্তেই ছড়িয়ে দেয় বিশ্বময়। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিশ্বজনমতকে বাঙালিদের পক্ষে আনতেও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। ফলে দিন দিন বেড়েছে আমাদের বন্ধুদেশের সংখ্যা। এক ঘরে হয়ে পড়েছে হানাদার পাকিস্তান। বিশ্বজনমত আগ্রাসী পাকিস্তানের বিপক্ষে যাওয়ায় পাকসেনাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। পক্ষান্তরে বিশ্বজনমত ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শক্তি-সাহস পেয়েছে, তাদের নৈতিক মনোবল ছিল ইস্পাতকঠিন। ফলে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন সহজ হয়েছে।

আমরা মনে করি, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও বৈষম্যহীন উন্নত এবং শক্তিশালী ও স্বাধীন বাংলাদেশকে উন্নতি-সমৃদ্ধির শিখরে নিয়ে যেতেও গণমাধ্যম একাত্তরের ন্যায় পথপ্রদর্শকের ভূমিকা রাখতে পারে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *