জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার সোবহান ও তার বাহিনী ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাস্থায় বসে থাকে। এলাকার লোকজন বাজারে যাওয়া আসার সময় খুন ও লাশ বস্তাবন্দি করে গুম করবে মর্মে নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া ওই মেম্বার ও তার স্ত্রী রুকিয়া বেগম লিলি ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নিকে দিয়ে এলাকায় ফেন্সিডিল, মদ-জুয়ার আসর, নারীদের দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ, ইয়াবাসহ নানা ধরণের মাদক ও চোরাকারবারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মেম্বারের এসকল কর্মকান্ডে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। ইতিপূর্বে ইউনিয়ন পরিষদের সবাই অনাস্থা প্রস্তাবও দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে। আর সোবহান মেম্বার ও তার বাহিনীর কারণে কোনাগ্রাম ও নয়াগ্রামসহ আশপাশ এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে বলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ করেছেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোক্তভোগিরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গ্রামবাসির পক্ষে লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রহিম জানান, জকিগঞ্জ উপজেলার মধ্যে তাদের দুই গ্রামের সুনাম ও ঐতিহ্য রয়েছে। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচিত করেছিলেন ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার কোনাগ্রামের মৃত বশারত আলী ওরফে বশাই মিয়ার ছেলে আব্দুস সালাম ওরফে সোবহান-কে। সে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষকে জুলম-নির্যাতন শুরু করে। বহিরাগত লোক দিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য গুন্ডা বাহিনী তৈরি করেছে। ঐ বাহিনীর মাধ্যমে এলাকার সাধারণ মানুষের উপর হামলা, শারীরিক নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। তার নির্যাতন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ভয়ে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করতে পারেন না। কেউ প্রতিবাদ করলে সোবহান, লিলি, মুন্নীসহ তাদের বাহিনী মিলে ওই লোকের উপর চালায় নির্যাতন। আর সাধারণ লোকজনকে হয়রানির জন্য বিভিন্ন সরকারী ও বেসরাকারি দফতরে মিথ্যে, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, কাল্পনিক কল্প-কাহিনী সাজিয়ে দরখাস্ত দাখিল করে এলাকার লোকদের হয়রানি করছে।
এছাড়া সোবহান ও তার স্ত্রী, মেয়ে এলাকার লোকদেরকে দেখলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকীর দিয়ে বলে সবাইকে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মিথ্যে কাহিনী সাজিয়ে মামলা দিয়ে সবাইকে জেলের ভাত খাওয়াবে। এলাকাবাসি তাদের এসকল হুমকী ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ভীত সন্ত্রস্থ। ফলে গ্রামের বয়োবৃদ্ধ থেকে শুরু করে সকল বয়সের নারী পুরুষ থাকেন আতঙ্কে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, আব্দুস সালাম ওরফে সোবহান, তার স্ত্রী রুকিয়া বেগম লিলিকে সিলেট জেলার কানাইঘাট থানা পুলিশ ২০১৮ সালের ২০ আগষ্ট কানাইঘাট বাজারস্থ তাহমিনা স্টোর থেকে ১৯ হাজার টাকা চুরি ও টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে (মামলা নং ২৪(৮)১৮ইং) দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন। এরপূর্বে ২০১৮ সালের ৮ জুলাই গোলাপগঞ্জ থানার ওয়াব প্লাজার কিডস ক্লাব নাম দোকানে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা চুরির অপরাধে মেম্বারের স্ত্রী রুকিয়া বেগম লিলির নামে গোলাপগঞ্জ থানার (মামলা নং ০৫(৬)১৮ ইং) রুজু হয়। এরপর ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি বিয়ানীবাজার জামান প্লাজায় আনজু জুয়ের্লাসে স্বর্ণ চুরি করাকালিন সময়ে জনগণের হাতে গ্রেফতার হয় লিলি। প্রত্যেক মামলায় লিলি কয়েক মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে এলাকায় পুনরায় তার মেয়ে ও স্বামী মিলে তাদের বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, বাজার ও দোকানে গিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে চুরি এবং অস্ত্র দিয়ে মহড়া দেয়। এনিয়ে এলাকাবাসি সিলেটের ডিআইজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জকিগঞ্জ থানার ওসির বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া ওয়ার্ডের মেম্বার সোবহানের নানা ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, মাদক ব্যবসা, নারীদের দিয়ে দেহব্যবসা, জনগণের ত্রাণের টাকা, চাল, ওয়ার্ডের উন্নয়নের বরাদ্দ আত্মসাত ও চুরির অভিযোগে ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের এক সভায় সকলের সর্বসম্মতিক্রমে অনাস্তা প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী সাক্ষর করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরণ করেন। এছাড়া “কোনা গ্রাম প্রবাসী সমাজসেবা পরিষদ” ও এলাকার শতাধিক লোক সাক্ষর নিয়ে থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। থানায় লিখিত দেয়ার কারণে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কোনাগ্রামের মৃত হাজী তৈয়ব আলীর ছেলে আলকাছুর রহমান, মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মালিক, মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে হেলাল আহমদ, মৃত শফিকুল হকের ছেলে বিলাল হোসেন, হাজী আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল্লা আল রাজু, মৃত হাবিবুর রহমান চৌধুরীর ছেলে মাওলানা আফতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ অন্যান্যদেরকে কোনগ্রাম বাবুর খালে ব্রিজের সামনে পেয়ে সোবহান, লিলি, মুন্নীসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী মিলে অস্ত্রশস্ত্র সহকারে হত্যার জন্য আক্রমন করে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাদেরকে রক্ষা করেন। এরপরও বেপরোয়া গতিতে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমসহ সাধারণ জনগণকে নির্যাতন-নিপীড়ন ও নানাবিধ অপরাধ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে সোবহান। তাই এলাকার সুনাম রক্ষা ও মান-সম্মান বিনষ্ট না করতে ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সোবহান তার স্ত্রী রুকিয়া বেগম লিলি ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নিসহ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্বমহলের কাছে জোর দাবি জানান এলাকাবাসি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আলকাছুর রহমান, এখলাছুর রহমান, মাওলানা হাফিজ মখলিছুর রহমান, রফিক মিয়া, আব্দুল মালিক মলই, আব্দুন নুর নরাই, আব্দুল হক, মফিক মিয়া, জয়নুল হক, আব্দুল আল রাজু, বেলাল আহমদ,জাহেদ আহমদ, আব্দুল মুমিন, আফতাব উদ্দিন চোধুরী, হেলাল আহমদ, দিলওয়ার আহমদ, রাজু আহমদ, আরিফ হোসেন, জাহেদ আহমদ, জহিরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুর রহিম, সাহেদ আহমদ, আরিফ হোসেন, রিফাত আহমদসহ প্রমূখ।