সেই ওসি মর্জিনা সিলেট রেঞ্জে বদলি

এদিকে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর থেকে কক্সবাজার পুলিশ প্রশাসনে বদলি ও রদবদল চলছে। সর্বশেষ পুলিশের কক্সবাজার রেঞ্জের ৩৪ জন কর্মকর্তাকে (পরিদর্শক) একযোগে বদলি করা হয়েছে।

বুধবার পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাদের নতুন কর্মস্থলে বদলি করা হয়। বদলিকৃতদের ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরোনো কর্মস্থল ছেড়ে দিতে হবে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের রাজারবাগের পুলিশ অডিটোরিয়ামে তাদের পোশাক পরে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবারের প্রজ্ঞাপনে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতারকে সিলেট রেঞ্জে, মহেশখালী থানার ওসি দিদারুল ফেরদৌসকে বরিশাল রেঞ্জে, চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমানকে খুলনা রেঞ্জে, রামু থানার ওসি আবুল খায়েরকে রাজাশাহী রেঞ্জে, পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজমকে রংপুর রেঞ্জে, কুতুবদিয়া থানার ওসি এ কে এম শফিকুল ইসলাম চৌধুীকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়। এ ছাড়া জেলার টেকনাফ, চকরিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, রামু থানা, চারটি পুলিশ ফাঁড়ি, আদালত, জেলা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এবং ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত আরও ২৮ জন পুলিশ পরিদর্শককে একযোগে চট্টগ্রাম রেঞ্জের বাইরে বদলি করা হয়েছে।

উখিয়া থানার প্রথম নারী ওসি মর্জিনা আক্তারের বিরুদ্ধে সম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠেছে। এক কলেজছাত্রী তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলাও করেছেন। এছাড়া ওসি প্রদীপের সঙ্গে মিলে এক ব্যক্তিকে ধরে এনে তার বাসার টাকাপয়সা লুটপাটের অভিযোগ ওঠেছে মর্জিনার বিরুদ্ধে।

গত ২৫ আগস্ট কক্সবাজারের উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তারসহ ৪ পুলিশের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন কলেজছাত্রী রিয়াদ সুলতানা নুরী। মহেশখালী কালারমারছড়া নুরুচ্ছবির কন্যা ও কক্সবাজার হার্ভার্ড কলেজের ছাত্রী রিয়াদ সুলতানা নুরী বাদী হয়ে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম, এএসআই মো. শামীম ও কনস্টেবল মো. সুমন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন উক্ত ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, উখিয়া থানায় কর্মরত কনস্টেবল কুমিল্লা জেলার হোমনা ইউনিয়নের হাসান আলীর ছেলে সুমনের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের সর্ম্পক হয় কলেজছাত্রী রিয়াদ সুলতানা নুরীর। পরে বিয়ের প্রস্তাব তোলায় পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে দাবী করেন মামলার বাদী ওই ছাত্রী।

কলেজছাত্রীর অভিযোগ, কক্সবাজারের উখিয়া মরিচ্যা চেক পোস্টে কনস্টেবল সুমন দায়িত্বকালে তার সাথে প্রমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তার সঙ্গে অনেকবার দেখা হয় এবং শারীরিক সর্ম্পকও হয়। পরে সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে বিয়ে করার জন্য চাপাচাপি শুরু হলে চলতি বছরের ৭ জুলাই রাতে উখিয়া থানায় গেলে সেখানে নির্মম পুলিশি নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর।

ছাত্রী বলেন, প্রথমে মারধর করেন ওসি মর্জিনা। পরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য (পুরুষ) দিয়ে দ্বিতীয় দফায় মারধর করানো হয়। পুলিশের ব্যাপক মারধরে সারা শরীরে আঘাত পান। শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণও হয়। একপর্যায়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়েও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলেও দাবি করেন মামলার বাদী কলেজছাত্রী।

পাশাপাশি অভিযুক্ত কনস্টেবল সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার হুমকি দিয়ে দফায় দফায় মারধর করা হয়। এমনকি ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে চালান দেয়ার হুমকিও দেন ওসি। ঘটনার পরদিন ৮ জুলাই (বুধবার) বাবার জিম্মায় ছেড়ে দেন ওসি মর্জিনা।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *