দিয়াবাড়ির অস্ত্র রহস্যের জট সাড়ে তিন বছরেও খোলেনি

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক::
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির খাল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনাটি নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। তখন ধারণা করা হয়, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অস্ত্রগুলো সীমান্ত থেকে এনে নিরাপদ স্থান খুঁজে না পেয়ে খালে ফেলে দেয়। সাড়ে তিন বছর আগের ওই ঘটনার এখনো কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ কারা, কী উদ্দেশ্যে এনেছিল, তা পুলিশ বের করতে পারেনি।

২০১৬ সালের জুনে তিন দফায় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তখন বলেছিলেন, নাশকতার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এগুলো আনা হয়ে থাকতে পারে। পরিত্যক্ত অবস্থায় অস্ত্রগুলো উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় তুরাগ থানায় তখন তিনটি পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। ওই তিন জিডি ধরেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম (সিটি) স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ তদন্ত করছে।

প্রথম দফায় ২০১৬ সালের ১৮ জুন উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ি খাল থেকে সাতটি কালো ব্যাগের ভেতর থেকে ৯৫টি ৭.৬২ এমএম পিস্তল,২টি ৯ এমএম পিস্তল, ৪৬২টি ম্যাগাজিন (২৬৩টি এসএমজি), ১০৬০টি গুলি, ১০টি বেয়নেট, ১৮০টি ক্লিনিং রড ও ১০৪টি স্প্রিং যুক্ত বাক্স উদ্ধার করা হয়।

১৯ জুন ওই খাল থেকে আরও তিনটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। ব্যাগে ছিল এসএমজির ৩২টি ম্যাগাজিন ও ৮টি ক্লিনিং রড।

২৫ জুন একই এলাকার অন্য একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয় আরও তিনটি ব্যাগ। তাতে ৫টি ওয়াকিটকি,২টি ট্রান্সমিটার,২টি ফিডার কেবল, ২২টি কৌটা (যার মধ্যে ছিল আইসি, ট্রানজিস্টর, ক্যাপাসিটর ও সার্কিট), ৭ প্যাকেট বিস্ফোরক জেল, ৪০টি পলিথিনের ব্যাগে থাকা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম এবং ৩২৫টি রুপালি ও সবুজ রঙের স্প্রিংযুক্ত বাক্স ছিল। এ ছাড়া আরও কিছু বৈদ্যুতিক ডিভাইসও উদ্ধার করা হয়।

তিন জিডির তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিটির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার মো. রহমত উল্লাহ এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্ত্র ও গুলিগুলো কারা রেখেছিল, তা জানা যায়নি। তদন্তের পর এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে।’

তবে সিটির আরেকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, কোনো বিদ্রোহী দল বা দেশের সন্ত্রাসী কোনো দল সীমান্ত থেকে অস্ত্রগুলো এনেছিল। নিরাপদ স্থান খুঁজে না পাওয়ায় এগুলো তারা কয়েক দফায় খালে ফেলে দেয়। দিয়াবাড়ি খাল থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের কয়েক দিন পরই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।

সিটির কর্মকর্তারা জানান, দিয়াবাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর সঙ্গে জঙ্গিদের ব্যবহৃত অস্ত্রের মিল নেই। জঙ্গিদের কাছে এ পর্যন্ত যত অস্ত্র পাওয়া গেছে, তার বেশির ভাগই পাশের দেশ ভারত থেকে আনা।

সিটির কর্মকর্তারা আরও বলেন, হোলি আর্টিজানে একে ২২ রাইফেল ও ৭.৬৫ পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছিল। দিয়াবাড়ি থেকে মর্টার শেল, বোমা বানানোর সার্কিটসহ বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। দিয়াবাড়ি থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রের সঙ্গে হোলি আর্টিজানে ব্যবহৃত অস্ত্রের মিল নেই। দিয়াবাড়ি থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো কারখানায় তৈরি।

অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের পর তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, এটি কোনো সাধারণ অপরাধীর কাজ না। যারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া ভন্ডুল করতে চায়, এটা তাদের কাজ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *