শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ: দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা কারও দানে পাওয়া নয়

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক
‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/কারো দানে পাওয়া নয়/দাম দিছি প্রাণ লক্ষ কোটি/জানা আছে জগৎময়/দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/কারো দানে পাওয়া নয়।’ লক্ষ কোটি প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছি এ দেশ। দেশটি ছোট্ট হলেও প্রতি বর্গকিলোমিটার অর্জিত হয়েছে রক্তের বিনিময়ে।

পাকিস্তানি হানাদাররা ১৯৭১ সালে চালিয়েছিল নারকীয় ও শতাব্দীর ঘৃণ্যতম হত্যাযজ্ঞ। বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সদস্যরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনে মাঠে নামে। তারা বেছে বেছে অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে।

স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, তাদের পরাজয় অনিবার্য। তাই জাতিকে মেধাহীন করতে বরেণ্য ব্যক্তিদের বাসা এবং কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করে। তারা দেশের নানা জায়গায় হত্যাযজ্ঞ চালালেও মূল হত্যাকাণ্ড ঘটায় রাজধানীর রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে।

আজ সেই দিন, ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনাবিধুর দিন। সারা দেশের মানুষ আজ বেদনাসিক্ত অশ্রু-শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করবে।

এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ গড়তে পারলেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতচক্রের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আসুন যুদ্ধাপরাধী জামায়াতচক্রের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, এটাই হোক ২০১৯ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।

আজ সারা দিন মানুষ ছুটবেন মিরপুর ও রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি স্মরণ করে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

কি ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর? ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রাখে।

১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই নিকট-আত্মীয়রা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে স্বজনের লাশ খুঁজে পায়। বুদ্ধিজীবীদের নিথর দেহজুড়েই ছিল আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারও কারও শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। লাশের ক্ষতচিহ্নের কারণে অনেকেই তাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্তও করতে পারেননি।

এই গণহত্যা চালানো হয় পরিকল্পিতভাবে। ডিসেম্বরে এসে নিজেদের পরাজয় অনিবার্য জেনে পাকিস্তানি দখলদাররা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার গোপন নীলনকশা গ্রহণ করে। তারা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করে তা তুলে দেয় তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের হাতে।

এরপর ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই হিটলিস্ট অনুযায়ী পাকবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘৃণ্যতম অপকর্ম চালানো হয়। সহস্রাধিক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে তারা।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য, ডা. মোহাম্মদ শফি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দিন আহমেদ, খন্দকার আবু তালেব, আনম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, সৈয়দ নাজমুল হক, জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ, ড. আবদুল খায়ের, ড. সিরাজুল হক খান, ড. ফয়জল মহী, ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, অধ্যাপক হবিবুর রহমান, কবি মেহেরুন্নেসা, গিয়াস উদ্দীন আহমদ প্রমুখ।

এ ঘৃণ্যতম ঘটনার চার দশক পর সেই ঘাতকদের বিচার হয়েছে, হচ্ছে। বিচারের পর আদালতের রায়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে মিরপুরের কসাই নামে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে।

ফাঁসি কার্যকর হয়েছে আলবদর নেতা ও জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অন্যদের। তবে ঘাতকদের বিচার এখনও শেষ হয়নি। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখনও বিচার চলছে অন্য ঘাতকদের।

এবারের বুদ্ধিজীবী দিবসে আরও একবার জাতিকে পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত করার শপথ নেবে জাতি।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা।

সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য এবং ৮টায় ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। ৮টা ৪৫ মিনিটে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

এছাড়া এদিন বিকাল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটশন মিলতনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির মতো সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযথ মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের জন্য সারা দেশে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *