স্বপ্নের যাত্রায় নিজেকে বদলে নেই, নিজেকে জানি: সুমন ইসলাম

যে স্বপ্নের মধ্যে সীমানা থাকে তাকে কি স্বপ্ন বলা যাবে? সে যাত্রাকে কি স্বপ্ন যাত্রা বলা যাবে যার কিনা শেষ আছে? শেষই যদি হবে তবে তা আর স্বপ্ন কেন?
ছোট বেলা থেকেই আমাদেরকে স্বপ্ন দেখানো হয়। বড় হয়ে আমাদের অর্জন কি হবে কিংবা কি হওয়া উচিত তা নিয়ে। সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরকে অনেক কিছুই বলা হয়, যেটি বলা হয় না তা হল নিজেকে চেনার কথা। অথচ যে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি তা পূরণ করতে হলে সবার প্রথম নিজেকেই যে চিনতে হবে সে উপলব্ধিটুকুই আমাদের নেই।

আমার নিজেকে জানার যাত্রাটি শুরু হয় ২০১৩ সালে যখন আমি ফ্যামেলি প্লানি এসেসিয়োশন বাংলাদেশ এফ, পি,এ বি’র ইয়ুথ লিডারশীপ মাস্টার ট্রেইনার নামে একটি ন্যাদারলেন্ড এর প্রকল্পে প্রশিক্ষণ এ অংশ নেই। প্রশিক্ষণ টি ছিল নরসিংদীর ভেলানগর এফ পি এবি শাখায়।

৭ দিনের প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ এর ৭ বিভাগ এর ৬ জন করে অংশ নেই ভাগ্যক্রমে সিলেটের ছয় জনের একজন সদস্য হিসেবে চান্স পেয়ে যাই। একজন প্রশিক্ষক সেইখানে আমার ঘুমন্ত চোখ খুলে দেন, উনার নাম হ্যালি আক্তার, যাই হউক  ওখানে গিয়ে দেখলাম একটা রুমের মধ্যে আরো ৪২ জন প্রশিক্ষণার্থী আমার মত বসে আছেন। তাদের সাথে বসে আমার অনুভুতি হল যে এখানে দেশ সেরা বিভিন্ন বিভাগের জেলার কলেজ এবং ভার্সিটিরর অসাধারণ সব মানুষজন বসে আছে। তাদের সাথে টিকে থাকার লড়াইটা আমার জন্য খুব কঠিন হবে। যতই সময় যাচ্ছে আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে সবাই কত কিছু জানে আর একেক জন জীবনের দৌড়ে আমার থেকে কত এগিয়ে। ঐ প্রোগ্রামেই উপলব্ধি করতে পারলাম যে আমিও পারি নিজের জীবন পরিবর্তনে অবদান রাখতে, যে অবদান হয়ত বদলে দিতে পারে আরো দশ জনের জীবন। বদলে দিতে পারে বাংলাদেশ।

আমার গল্পটা শুরু এখান থেকেই তখন থেকেই চিন্তা হতে থাকে যে, সবাই যদি নিজের ভাল চায়, অন্যের ভাল চায়, সর্বোপরি দেশের ভাল চায় তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কেন আমাদের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশের দিকে আমরা এগিয়ে যাই না?
ধীরে ধীরে জেনে গেলাম, যে বাংলাদেশ কে নিয়ে স্বপ্ন আমাদের এক হলেও সেই স্বপ্নকে আমরা শিক্ষা মাধ্যমের নামে তিনটি ভাগে ভাগ করে রেখেছি। যে মাধ্যমে থেকে আমরা একে অপরের ব্যপারে না জেনে হয়ত লালন করছি অনেক ভুল ধারনা। যার ফলশ্রুতিতে হয়ত তাদের মূল্যবোধকে সম্মান জানাতে পারছি না। বুঝতে পারছি না তাদের অবদানকে যা তারা দেশের জন্য করে যাচ্ছে।

আমাদের অভিযোগের কোন শেষ নেই। নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত আমরা। কিন্তু কখনো হয়ত অনুভবই করি না যে আমাদের সমস্যার জন্য অনেকাংশে আমি নিজেরাই দায়ী। সেখানে তা সমাধানের জন্য আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকলে এগিয়ে যাবো না কখনই। সমস্যার জন্য দায়ী করে আমরা সবসময় বলি আমাদের দেশে সঠিক নেতৃত্ব নেই। নেতৃত্ব নিয়ে যখনই কথা হয় আমরা কিছু সুমহান গুনাবলির কথা বলি। কিন্তু বলি না যে আমাদের জায়গা থেকে আমরা কি করতে পারতাম। না বলার কারনটা, হয়তো আমাদের মাঝে সে বিশ্বাসই নেই যে আমরাও পারি।

সেই অনুভুতি থেকেই আমার পথ চলা শুরু। এরপর থেকে যতবার থেমে গিয়েছি, বারবার নিজেকে শুনিয়েছি ‘আমি পারি’। ইয়ুথ মাস্টার ট্রেইনার ঐ প্রোগ্রামেই আমি শিখেছিলাম কিভাবে মানুষের সামনে দাড়িয়ে কথা বলতে হয়। কিভাবে নিজের বক্তব্যটি কার্যকর ভাবে তুলে ধরা যায় মানুষের সামনে। এরপর থেকে যখনই সুযোগ পেয়েছি কথা বলেছি মানুষের সামনে। চর্চা করেছি, নিজের কথা বলার দক্ষতা কে বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘ ৩দিন পর যখন ঐ প্রশিক্ষণ শেষ হল তখন মনে হল এবার আমার পালা। যা শিখেছি তা কাজে লাগাতে হবে। আমিও এবার মানুষকে স্বপ্ন দেখাব। যারা আমার মতই আটকে আছে নিজের জীবনের গন্ডিতে তাদেরকে দেখাব কিভাবে তারাও পারে তাদের স্বপ্নকে সীমাহীন দিগন্তে ছড়িয়ে দিতে।
এর পাশাপাশি একটা চিন্তা ছিল। আমি যে সুযোগ পেয়েছি তা সবাই পায় না, আর অনেকেই পেয়ে কাজে লাগায় না। ঐ সময়টাতে যারা সুযোগ পায় না তাদের জন্য খুব বেশি কিছু করার না থাকলেও সুযোগ ছিল যারা সুযোগ পায় তারা যেন তা কাজে লাগাতে পারে তাতে সাহায্য করা। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই শুরু করলাম নেতৃত্ব পড়ানো। সিলেটের ভিবিন্ন আর্থ সামাজিক সংগঠন, এন জি ও,প্রকল্প FPAB, Germany GIZ, Meri stope Bangladesh, IOM, FIVDB, IRSOP, British High Commission, safe Migration, UK,AID,MJF এই সংস্থাগুলির কাজ করার মাধ্যমে সমাজের সার্বিক অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি নিজের ও অন্যদের মাঝে নেতৃত্বের গুনাবলি ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই কাজ করে যাচ্ছি সর্বশেষ প্রক্লপ হিসেবে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ও রামাপাশার প্রায় ৫০০ যুবক ও যুব নারীদের নিয়ে সংঘ প্রক্লপের যাত্রা শুরু করি উন্নয়ন সংস্থা এফ আই ভি ডি বি’র বাস্তবয়নে মার্চ এর শুরুর দিকে শরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৪০ জন যুবক ও যুব নারীদের প্রতিমাসে করে যাচ্ছি লাইফস্কিল সেশন, যেখানে তারা শিখতে পারছে জীবন দক্ষতা, অধিকার,লক্ষ স্থির, নিজেকে বদলে দেওয়া, কোনটি আমার জন্য ভালো, আমরাও পারি, অসম্ভব বলে কিছু নেই,ভবিষ্যৎ নির্মাণ, আমিও নেতা,জন আলাপন, সামাজিক সম্প্রীতি ও শান্তি অর্থাৎ কিভাবে আমরা স্বপ্নের যাত্রায় নিজেকে বদলে নিতে পারি তাদের মাঝে এই অল্প কয়েক মাসেই অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি, পরিশেষে এটাই বলতে চাই স্বপ্নের যাত্রায় নিজেকে বদলে নিতে হলে আগে নিজেকে জানতে হবে, ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।

লেখকঃ সাংবাদিক, মানবাধিকার ও উন্নয়ন কর্মী।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *