অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তালিকা করা হয়েছে: ওবায়দুল কাদের

সিলেট নিউজ টাইমস্ ডেস্ক
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দল ও সহযোগী সংগঠনে বিতর্কিত বা অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে তালিকা করা হয়েছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে এই তালিকার বাইরের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারা কমিটিতে স্থান পাবেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এ তালিকা পাঠানো হচ্ছে। সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা এটি সমন্বয় করবেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদেরও একটি তালিকা নেত্রী (শেখ হাসিনা) বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে তৈরি করেছেন। সে তালিকা তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। বিতর্কিত কেউ যাতে বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মেলনে কমিটিতে স্থান করে নিতে না পারে, সে জন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। নেতাকর্মীদের সেভাবেই দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।

তিনি বলন, নেত্রী তার নিজস্ব কিছু লোক ও গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট সব মিলিয়ে খোঁজ নিয়ে এই তালিকা করেছেন। আমি নিজেও জেলার নেতাদের সঙ্গে বিতর্কিতদের তালিকা নিয়ে কথা বলেছি। তালিকায় থাকা বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীরা কাউন্সিলে কোনো ধরনের জায়গা না নিতে পারে, সেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, জঙ্গিবাদ, ভূমি দখলকারী, অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ও বিতর্কিতদের আওয়ামী লীগে স্থান হবে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের জেলা ও সহযোগী সংগঠনগুলো গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি করবে। গঠনতন্ত্রে যেভাবে কমিটি করার দিকনির্দেশনা আছে, সে অনুযায়ী কমিটি করতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা পর্যায়ের নেতাদের কাছে নির্দেশনা যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে সেতুমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা বলতে পারবে তার মেডিকেল বোর্ড। বোর্ড যেটা বলছে, সেটাই আমাদের বক্তব্য। বোর্ড তো বলেনি তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের বিষয় আছে।

উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা সম্মেলনে থাকতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা যদি দলে থাকে, তাহলে সম্মেলনেও থাকতে পারবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এ পর্যন্ত ২৭টি জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্মেলন শেষ করা হবে। যেগুলোর কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, সেগুলোর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্মেলন হবে। গত তিন বছরে আমাদের যত সাংগঠনিক কাজ হয়েছে, ‘৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের ইতিহাসে এত কাজ আর হয়নি।

চলমান শুদ্ধি অভিযানের জন্য সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

এ বিষয়ে কাদের বলেন, দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর এ শুদ্ধি অভিযানে অনেকে গ্রেফতার হয়েছে, নজরদারীতে আছেন অনেকে। ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও আছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এ জন্য সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছি।

এ সময় তিনি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাদের গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি গঠনের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

মুজিবর্ষকে সামনে রেখে একটি বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালনের কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বলেন, এ নিয়ে আমাদের বিস্তর পরিকল্পনা আছে।

নতুন সড়ক আইন নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আইনে অনেক কিছুই লেখা আছে। আমরা আইনের হুবহু বাস্তবায়ন করছি। আইন নিয়ে অনেকের অনেক কথা আছে। কেউ বলছেন অপরাধীকে মাফ করে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এ আইনে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশ কমে আসবে। নতুন আইন সবাই মেনে চললে উপকৃত হবেন।

মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে পরিসংখ্যান, সেই পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের দুর্ঘটনা কিন্তু কমে গেছে। এখানে দুর্ঘটনা যতটা না বেশি তার চেয়ে ক্যাজুয়ালিটিটা বেশি। দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেশি। ছোট ছোট যান যেমন নছিমন, করিমন এ সব গাড়িতে টোকা লাগলেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য হারটা বেশি। আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী এ সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই নির্দেশনা আমরা সবাই চালক, যাত্রী ও পথচারী অনুসরণ করি তাহলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগের সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একই মঞ্চে হবে। সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা এই বিষয়ে দেখভাল করছেন। জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে করা উপ-কমিটিগুলো সভা করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। অর্থ কমিটি বাজেট ঠিক করে ফেলেছেন। পার্টির সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে তারা বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন। প্রস্তুতি থেমে নেই, সম্মেলন সঠিক সময়ে হবে। ২০ ডিসেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং ২১ ডিসেম্বর কাউন্সিল অধিবেশন।

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা না হওয়া নেতাকর্মীদের মনে প্রশ্ন রয়েছে- এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের বিষয়টি রয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি নির্বাচন কমিশন সিডিউলটা কীভাবে দেয়। এই তিন মহানগরে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার সঙ্গে মিল রেখে সম্মেলনের তারিখ দেয়া হবে। এই বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, আইনবিষয়ক সম্পাক শ ম রেজাউল করিম, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুজ, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য রিয়াজুল কবীর কাওছার, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *