সিলেট নগরীর আখালিয়ায় কিশোর গ্যং এর দৌরাত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুপুর ২ ঘটিকায় কিছু উপরে , ছুটির ঠিক আগমহুর্তে স্কুলের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে ৮/১০জন বখাটে কিশোরের একটি দল। সবার বয়সই ১৪/১৫ বছর মধ্যে। কেউ বসে আছে মটর সাইকেলে, কেউ স্কুলের দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো আবার কেউ রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে বিভিন্ন রকমের এনার্জি ডিংকস খেয়ে খেয়ে উল্লাস করছে। স্কুল ছুটি হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হল তাদের আসল উৎপাত। স্কুলের মেয়েরা গেইট দিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথেই কেউ উচ্চ সুরে গান ধরল, কেউ শিষ বাজাতে শুরু করল আবার কেউ রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে মেয়েদের দিকে খারাপ অঙ্গ ভঙ্গি করতে শুরু করল। কোন কথা না বলে অসহায়ের মত ছাত্রীরা নিরবে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগল। যেন প্রতিবাদ করলেই বিপদ! কোন কোন অভিবাবক প্রতিবাদ দেখালেও তাদেরকে শুনতে হচ্চে হুমকি ধামকি।

এটা নগরীর আখালিয়া বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সামনের রাস্তায় এখন নিত্য দিনের চিত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই কিশোর গ্যাংটি নগরীর আখালিযা  ও বাগবাড়ি’র  এলাকার রাজন ও মাছুম বাহিনীর ছোট গ্রুপ হিসাবে পরিচিত। তবে  মাছুমের পরিচয় সে দিনের বেলায় সি এন জি  চালায় ও রাতে সে ইয়াবা ব্যবসা করে। কিশোর গ্যাংটিতে রযেছে ২০/২৫জন সদস্য। যাদের সবার বয়সই ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।

তবে যাদের মধ্যে সাকিব, তানবীর, ইমন, সকিল, কালাশাহ, আশরাফ,রাব্বি,সাগর,মোয়াজ, এর নামে কয়েকজন কিশোরের নাম জানা গেলেও বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। গ্রুপ বড় করতে ওরা প্রতিদিনই এলাকার নিম্নবৃত্ত পরিবারের কিশোরদেরে এনে দলে ভিড়াচ্চে। এদের উৎপাতে অতিষ্টি পুরো এলাকাবাসী। চুরি, ছিনতাই, মারামারি ও মেয়েদের উত্যক্ত করা এদের নিত্যদিনের কাজ। রাতে নেশার টাকা জোগাড় করতে ওরা বেপোরোয়া ছিনতাই শুরু করে। আর দিনে স্কুল কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েদের উত্যক্ত করে। ওদের মুল নেতৃত্বে রয়েছে আখালিয়া এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী রাজন বাহিনীর প্রধান রাজন-সুমন নামে দুই ভাই।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কিছু বাসিন্দা জানান, এসএমপির জালালাবাদ থানাধীন আখালিয়া নোয়াপাড়া এলাকার স্থানীয় সিএনজি স্ট্যান্ডের ম্যানেজার হিসাবে পরিচিত বাবু মিয়ার দুই ছেলে রাজন আর সুমন। ছোট বেলা থেকেই এই দুই ভাই এলাকায় চুরি ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। অপরাধ জগতে তাদের নাম ছড়িয়ে পড়লে তাদের উপর নজর পড়ে কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতার। ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে রাজনৈতিক দল বদল করতে থাকা এই দুই ভাই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ছত্র ছায়া এলাকায় গড়ে তুলেছে এক ভয়ংকর সন্ত্রাসী গ্রুপ। যে গ্রুপটি বর্তমানে রাজন বাহিনী হিসাবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছে। রাজন-সুমন দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে এই গ্রুপ, প্রবাসীদের জমি দখল, চাঁদাবাজি, অপহরন করে মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে যাচ্চে নির্ধিদায়। এসব অপরাধে বাহিনী প্রধান দুই ভাই রাজন-সুমনের নামে এসএমপির বিভিন্ন থানায় রয়েছে প্রায় ১৮/১৯টি করে মামলা। কিছু দিন পরপরই এরা এলাকার প্রাধান্য বিস্তার নিয়ে বন্দুক যুদ্ধে জড়ায়। আধিপত্য বিস্তারের স্বার্থে তাদের গ্রুপের শক্তি বৃদ্ধির জন্যই এরা দলে ভিড়াচ্চে এলাকার বস্তিবাসী নিম্নবৃত্ত পরিবারের কিশোর ও তরুনদের। শুধু গ্রুপে ভিড়িয়ে ক্লান্ত নয়, তাদের মাদক ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে প্রথমে ফ্রিতে মাদক সেবন করিয়ে উঠতি তরুন ও কিশোরদের মাদকাসক্ত করে এদের মাধ্যমে রাজন-সুমন দুই ভাই মিলে চালিয়ে যাচ্চে রমরমা মাদক ব্যবসা। রাজন-সুমন প্রথমে বিনামুল্যে মাদক সেবন করালেও পুরোপুরি মাদকাসক্ত হয়ে যাওয়ার পর আর তারা নেশাগ্রস্ত কিশোরদের কাছে ফ্রি’তে মাদক বিক্রি না করাতে মাদকের টাকা জোগাড় করতে সেই সমস্থ কিশোরেরা নেশার টাকা জোগাড় করতে বেপোরোয়া ছিনতাই শুরু করে।

এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নেশার টাকা জোগাড় করতে কিশোর গ্যাং এর এসব সদ্যসরা এলাকায় শুরু করে বেপোরোয়া ছিনতাই। এলাকার সিএনজি চালক থেকে শুরু করে পথচারি কেউই তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়না। সুযোগ পেলেই লোকজনকে ধরে এলাকার নির্জন স্থানে নিয়ে সর্বস্বলুঠ করে ছেড়ে দেয়া হয়। আবার বড় ধরনের কোন কাজ পেলে ধরে নিয়ে যায় বড় ভাই খ্যাত রাজনের আস্তানায়। কিশোর গ্যাং এর প্রত্যেক সদস্যদের সাথে সব সময় থাকে ছোট ছোট ছুরি। আবার প্রয়োজনে এরা আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করে থাকে। এরা প্রত্যেকেই ওই এলাকার বিভিন্ন বস্তি বা কলোনীতে বসবাসরত। আবার কিছু ধনীর বখে যাওয়া কিশোরও যোগ দিয়েছে এদের সাথে। এরা কিছু দিন পরপরই নানা অপরাধে গ্রেফতার হয় আবার খুব তাড়াতাড়ি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে একই অপরাধ শুরু করে। রাজন বাহিনীর ভয়ে এদের প্রতিবাদ করারও কেউ সাহস পায়না। সামান্য তর্কে বির্তকে জড়িয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া, পা কেটে ফেলা এদের কাছে সামান্য ব্যাপার বলেই মনে হয়। এসব ঘটনায় ওরা গ্রেফতার হয় আবার দ্রুত সময়ে জেল থেকে বেরিয়ে এসে বাদীর উপর চড়াও হওয়ার কারনে কোন ঘটনা ঘটানোর পর এদের বিরুদ্ধে কেউ এখন মামলা করারও সাহস পায়না।

এলাকার সাধারন মানুষের মতে দ্রুত সময়ে রাজন বাহিনীর মাদক ব্যবসা আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড না থামাতে পারলে এলাকার কিশোরদের মাদকাসক্ত ও বখে যাওয়া থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *