আল্লামা ফুলতলী( রহ) এর ইসালে সাওয়াব মাহফিলে গুরুত্বপূর্ণ তালিম প্রদান করেন-আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী।

কয়েস মাহদী :: এশিয়া মহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ সিলেটে জেলাস্থ জকিগঞ্জের কৃতিসন্তান শামসুউলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর ১১ তম ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষে জকিগঞ্জের ফুলতলী ছাহেব বাড়িতে গতকাল মঙ্গলবার নেমেছিল লাখো মানুষের ঢল। ফুলতলী ছাহেব বাড়ি সংলগ্ন বালাই হাওরে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল ঈসালে সাওয়াব মাহফিল। এতে মুরিদীন-মুহিব্বীনের উদ্দেশ্যে তা’লীম-তরবিয়ত পেশ করেন আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরী উস্তাযুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকবো না। একদিন না একদিন আমাদের এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমরা কত মানুষের জানাযায় উপস্থিত হই। যতদিন জীবিত থাকি যেনো পাড়া প্রতিবেশীর জানাযায় অংশগ্রহণ করি, কাফন দাফনে সহযোগিতা করি। তিনি প্রিয়নবী (সা.)-এর হাদীস উদ্ধৃত করে বলেন, যে ব্যক্তি কোনো জানাযায় শরীক হয়ে জানাযার নামায পড়ে সে এক পাহাড় পরিমাণ সওয়াব লাভ করে আর যে জানাযার নামাযে শরীক হবার পাশাপাশি কাফন দাফনেও শরীক হয় সে দুই পাহাড় পরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

তিনি মেহমানদারী ও প্রতিবেশির হক আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেনো মেহমানের সমাদর করে, প্রতিবেশীকে সম্মান করে এবং হয়তো ভালো কথা বলে নতুবা নীরব থাকে। এতিমের হকের বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতিমের হক আত্মসাৎ করা আগুন ভক্ষণের শামিল। কোনো অসহায় বাবা মৃত্যুর আগে হয়তো তার সন্তানদের ছায়া দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা করে যেতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর তার প্রতিবেশি এতিমের সম্পদ দখল করে নিয়েছেন এমন অভিযোগ শুনেছি। আপনারা এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ নয় বরং উদ্ধারের চেষ্টা করবেন। জালিম যত শক্তিশালী হোক তার মোকাবিলায় আমাদের একটি অস্ত্র আছে তা হলো এতিমের কান্না। এতিমের কান্নাকে ভয় করবেন। তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা প্রিয় মাতৃভূমির সাধারণ জনগণ, অসহায় মানুষের প্রতিনিধি। আপনাদের প্রতি আহ্বান, আপনারা গ্রাম বাংলার এ অসহায় মজলুম মানুষদের পাশে দাঁড়ান, ভালো মানুষদের গুরুত্ব দিন। কোনো সার্কেল বা ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সমাজের খিদমতে নিজেকে উৎসর্গ করুন।

লাখো মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ মাহফিল সকাল ১০টায় আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। খতমে কুরআন, খতমে বুখারী, খতমে খাজেগান, খতমে দালাইলুল খাইরাতের পাশাপাশি স্মৃতিচারণমূলক ও জীবনঘনিষ্ট আলোচনায় অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে অতিবাহিত হয় পুরো দিন।

বাংলাদেশ আন্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী’র পরিচালনায় মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস আল্লামা হবিবুর রহমান, ভারতের উজানডিহির পীর ছাহেব হযরত মাওলানা সায়্যিদ মোস্তাক আহমদ আল মাদানী, সায়্যিদ জুনাইদ আহমদ আল মাদানী, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী, জালালপুর কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শুয়াইবুর রহমান বালাউটী, মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, মুফতী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, আনজুমানে আল ইসলাহ ইউকে’র প্রেসিডেন্ট মাওলানা আব্দুল জলিল, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. ঈসা শাহেদী, মুফতী মাওলানা আবূ নছর জিহাদী, মহাখালী কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিছ মাওলানা মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

মাহফিলে সম্মানিত অতিথি আলহাজ্ব হাফিজ আহমদ মজুমদার এমপি, নেছার আহমদ এমপি, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আব্দুশ শাকুর চৌধুরী ফুলতলী, ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারি হাফিজ মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা এ.কে.এম মনোওর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, সৎপুর কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সিদ্দিকী, লন্ডনপ্রবাসী পীর মোস্তফা আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।

মাহফিলে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ.উ.ম আব্দুল মুনঈম, ইকড়ছই আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ছমির উদ্দিন, বুরাইয়া কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ফারুকী, দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিছ মাওলানা বদরুজ্জামান রিয়াদ, মাওলানা আব্দুর রহমান নিজামী প্রমুখ।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রহীম, রাখালগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা হবিবুর রহমান, জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল ইসলাম, সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবূ জাফর মুহাম্মদ নুমান, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শামসুল ইসলাম, মাথিউরা সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল আলিম, সৎপুর কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ছালিক আহমদ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবূ ছালেহ মুহাম্মদ কুতবুল আলম, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা আজির উদ্দিন পাশা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা বেলাল আহমদ, বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ফারুকী, ইছামতি কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী, বিশ্বনাথ আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নুমান আহমদ, স্কুল অব এক্সেলেন্স-এর প্রিন্সিপাল মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসাইন জাহেদ, সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্যকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ্জ শেখ মখন মিয়া, ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আজিজুর রহমান তালুকদার, লতিফিয়া দারুল কিরাত সমিতি, উত্তর পূর্বাঞ্চল, আসাম’র সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার উদ্দিন, ঢাকা জেলা লতিফিয়া কারী সোসাইটির সভাপতি মাওলানা আবু সাদেক মুহাম্মদ ইকবাল খন্দকার, মাওলানা কাজী আলাউদ্দিন আহমদ প্রমুখ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *