উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ সময় এখন ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার

আবু বকর (পারভেজ) শিক্ষার্থী’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:: বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিকভাবে সবসময়ই সচেতন। নিজের অধিকার বিষয়ে সচেতন না থাকলে বাঙ্গালীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে দেশ স্বাধীন করতে পারত না। পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু যখন বললেন “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দিব তবু এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ” তখন বাঙ্গালীরা সত্যিকার অর্থেই রক্ত দেয়ার জন্যে এগিয়ে এসেছিল।

বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতার প্রমাণ পাওয়া যায় চায়ের দোকানে বসলে অথবা যেকোন পাবলিক যানবাহনে যাতায়াত করলে। যেখানে গণতন্ত্রের অন্যতম আদর্শ আমেরিকার জনগণ রাস্তার ওপাশে গিয়ে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে অনিহা প্রকাশ করে, সেখানে বাংলাদেশের বৃদ্ধ ব্যক্তিও হুইল চেয়ারে বসে ভোট কেন্দ্র যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই রাজনৈতিক সচেতন মহলে, এই শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে আপনাকে বুঝতে হবে তারা কি চায়।

তরুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তারা কখনো কোন স্বাধীনতা বিরোধীর গাড়িতে স্বাধীন বাংলার পতাকা দেখতে চায় না,কোন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই যারা রাজাকারদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছিল তরুণরা তাদেরকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তারা চায় কলঙ্কমুক্ত আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ। তাই ২০০৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ আধুনিক ইশতেহার ঘোষনা করলো তখন বিপুল জনসমর্থন নিয়ে জয়লাভ করলো।

ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুরু হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।
আওয়ামীলীগ সরকারে অন্যতম সফলতা জঙ্গীবাদ সন্ত্রাস দূরীকরণ। ২০০১ সাল পরবর্তী বিএনপি সরকারের আমলে সারাদেশে জঙ্গীবাদ মাথাচারা দিয়ে উঠেছিল। সারদেশের তেষট্টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা, পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে হামলা, আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইদের উত্থান ঘটেছিল। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসে শক্তহাতে জঙ্গীবাদ নির্মূল করে। সরকারী চাকরিতে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিসিএসের স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠায় আওয়ামীলীগের সাফল্য অতুলনীয়। বিএনপি সরকারের ২০০১-২০০৬ মেয়াদে যেখানে মাত্র দুইবার বিসিএস পরীক্ষা হয়েছিল সেখানে আওয়ামীলীগের দুই মেয়াদে নয় বার বিসিএস পরীক্ষা হয়েছে। আজকে এই বিসিএস পরীক্ষাকে তরুণ সমাজে জনপ্রিয় করে তুলার জন্য আওয়ামীলীগ সরকারের অবদান অতুলনীয়৷ বিভিন্ন চাকুরীর পরীক্ষায় আওয়ামীলীগ সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশংসনীয়। আগে একটা কথা প্রচলিত ছিলো মামা এবং চাচার জোর না থাকলে চাকুরীতে টিকে থাকা অসম্ভব। এই বাক্যটাকে আওয়ামীলীগ সরকার মিথ্যা প্রমাণে সফল হয়েছে। যদিও চাকরির বাজার বেকারদের তুলনায় অপ্রতুল তথাপি মেধাবীরা পড়াশোনা করলে চাকরি পাচ্ছে। এখন আওয়ামীলীগ সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বেকারত্বের অভিশাপ থেকে তরুণদের মুক্তি দেয়া। সেই ব্যর্থতা সফলতায় রূপদান করতে সরকার ১০০ শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলার উদ্যোগ নিয়েছে যাতে কর্মসংস্থান হবে ১ কোটি মানুষের। তথ্য প্রযুক্তিখাতে এই সরকারের অবদান অসামান্য। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

আইটি সেক্টরে আমাদের অনভিজ্ঞতা লাঘব করার জন্য সরকার আইটি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যাতে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এই সেক্টরকে আরো দক্ষ করে গড়ে তুলা যায় বিশ্বায়নকে মোকাবেলা করার জন্য। নারীর ক্ষমতায়নে এই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তরে নারীর আগমন পুরুষের চাইতেও বেশী। চাকুরীক্ষেত্র থেকে শুরু করে বিমানের পাইলট, সেনাবাহিনীর মেজর সর্বক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সফলতার সঙ্গী। সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণে সরকার সচেষ্ট।

কৃষিক্ষত্রে আওয়ামীলীগ সরকার এক নিরব বিপ্লব সাধন করেছে,কৃষিঋণ প্রদান,কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক সরঞ্জমাদির উপস্থিতিতে আজ বাংলাদেশ শ্রীলংকার মতো দেশে চাল রপ্তানী করতে সক্ষম হচ্ছে। বাংলাদেশের সোনালী ফসল মৃতপ্রায় পাট শিল্পকে সরকার পুনরুজ্জীবিত করেছে। কৃষিক্ষত্রে অভাবনীয় সাফল্যের প্রধান কারণ সরকারের আন্তরিকতা এবং যথাসময়ে ঋণ প্রদান,সার এবং উন্নতমানের বীজ প্রদান।

অবকাঠামোগত দিক দিয়ে এই সরকারের আমলে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কয়েকটা মেগা প্রকল্পে হাত দিয়েছে সরকার তার মধ্যে পদ্মাসেতু এবং মেট্ররেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে বিরামহীম গতিতে, চট্টগ্রামে থেকে ঢাকা ৮ লেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, সিলেট থেকে ঢাকার ৪ লেন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে সরকার ফ্লাইওভার তৈরি করছে। বিদ্যুখাতে সরকার সাফল্য অতুলনীয় ঘরে ঘরে বিদ্যু পৌছে দেয়ার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে, বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (মেঃওঃ): ২০,৭৭৫* সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন (মেঃওঃ): ১১,৬২৩ (১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮) গ্রাহক সংখ্যা: ৩ কোটি ১৮ লক্ষমোট সঞ্চালন লাইন (সা.কি.মি.): ১১,৩৫৩বিতরণ লাইন (কি.মি.): ৪ লক্ষ ৭৯ হাজারসিস্টেম লস: ১১.৮৭% (জুন ২০১৮)বিতরণ লস: ৯.৬০% (জুন ২০১৮)মাথাপিছু উৎপাদন (কিঃওঃআঃ): ৪৬৪ কিঃওঃআঃবিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী: ৯১%। বর্তমান সরকার অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে এক বিপ্লব সাধন করতে সফল হয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ আজ উন্নয়নের এক রোল মডেল। যারা একসময় এই দেশ শাসন করতো তারা বলতেছে “খোদা কে ওয়াস্তে হামে বাংলাদেশ বানা দে”।

এই অভাবনীয় সাফল্য সম্ভব হয়েছে একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার সততা এবং বিচক্ষণতায়। ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে এশিয়া হবে সেন্ট্রাল গ্রাভিটি তাই আমেরিকা চাচ্ছে এই উপমহাদেশে তার শক্ত অবস্থান তৈরী করতে। বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন, ভারত এবং রাশিয়া ব্যাপক সাহায্য সহযোগীতা বজায় রেখেছিলো। আর ভারত এইটা সম্পর্কে অবগত যে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে ভারতের উন্নয়ন সম্ভব না। তাই ভারত তার উন্নয়নকে সচল রাখতে বাংলাদেশকে অবশ্যই স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে। আর বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন কাজ করে যাচ্ছে। মেগা প্রকল্প থেকে শুরু করে শিল্পাঞ্চল তৈরী সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চীনা কোম্পানীগুলোর উপস্থিতিতে ভালই সফলতা পাচ্ছে বাংলাদেশ। পায়রার সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ পেয়েছে চীন। এছাড়া পায়রায় ১ হাজার মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যু কেন্দ্র নির্মাণ করবে চীন। এদিকে রাশিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে যন্ত্রপাতি দিয়ে নিজেদের যুক্ত রাখতে চায় এছাড়া বাংলাদেশের অগ্রাধিকার মূলক বড় প্রকল্পগুলোতে নিজেদের যুক্ত রাখার ইচ্ছা পোষণ করেছে।

আলফ্রেড থেয়ার মেহ্যানের একটি যুক্তি আছে, সমুদ্র যে দেশের নিয়ন্ত্রণ থাকবে বিশ্ব শাসনের কর্তৃত্ব থাকবে তার হাতে। তাই ভবিষ্যৎ ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বঙ্গোপসাগর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিস্পত্তি হয়েছে এবং বাংলাদেশের দখলে এসেছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গমাইল এলাকা। আর এই সমুদ্র বিজয়ের ফলে ভূ-রাজনৈতিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর এবং বঙ্গোপসাগর উপকূলে মেগা প্রকল্পগুলোতে সম্পৃক্ত হয়েছে বড় দেশগুলো।মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর সরব উপস্থিতিতে পরিলক্ষিত হয় বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ। আলীবাবা চলে এসেছে, আমাজানও আসার প্রস্তুতি মোটামুটি সম্পূর্ণ এবং বাংলাদেশে ই-কমার্স সাইটের সংখ্যা প্রায় ৫০০। গত ৫ বছরে ই- কমার্স খাতে বিনিয়োগ ১০০ কোটি টাকার মতো আর বার্ষিক বেচাকেনা প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। তরুণদের কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি। ক্ষমতাশালী দেশগুলোর দাবার গুটি না হয়ে দেশের স্বার্থরক্ষার জন্যে আমাদের দরকার দক্ষ নেতৃত্ব। দিন বদলের সনদে শেখ হাসিনা সফল, গ্রাম হবে শহর এই স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে মোবাইল ব্যাংকিং আমাদের অনেক সহায়তা করবে।

গ্রামীণ লেনদেনকে সচল রাখতে মোবাইল ব্যাংকিং একটি সহজ মাধ্যমে যাতে করে শহরের টাকা সরাসরি গ্রামে চলে যাবে গ্রাহকের কাছে অথবা এজেন্টের কাছে। এর ফলে দেখা যাবে গ্রামীণ নিত্যদিনের চাহিদা পূরণ হবে এবং তাতে আর্থিক সংকট দেখা দিবে না ফলশ্রুতিতে বাজার অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *