র্যাবের পৃথক অভিযানে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে মানব পাচারকারী চক্রের ২ সদস্য এবং দক্ষিণ সুরমা থেকে আটক হয়েছে ফেইসবুকে গুজব রটনাকারী যুবক।
গতকাল বৃহস্পতিবার ও আগের দিন বুধবার এসব অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৯ সিলেট ক্যাম্পের একটি দল গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে জিন্দাবাজারের কানিজ প্লাজা মার্কেটের নিচতলায় তাজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস অফিসে অভিযান চালায়।
এ সময় আটক করা হয় মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য মোগলাবাজার থানাধীন কদমতলী পানিপাড়ার সাজিদুর রহমানের পুত্র মিজানুর রহমান (২৭) এবং গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ীর জলিল আহম্মেদের পুত্র জয়নাল আবেদীন তোফায়েল (২৭)।
এ সময় ৫৪ টি পাসপোর্ট, ১টি ল্যাপটপ, ১টি চার্জার, ২টি পেন ড্রাইভ, ১টি ডেস্কটপ, ৫’লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ৭১ টি বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ৯ টি তুর্কি মুদ্রা, ১৯ টি রেজিস্ট্রার খাতা, ৪ টি চেক বই, বিভিন্ন ব্যাংকের ১২ লাখ টাকার ৫ টি চেক, ৩ টি বিদেশি সীম কার্ড, ৬ টি মোবাইল, ৪ টি সীম কার্ড, বিভিন্ন পাবলিক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে অর্থ লেনদেনের ১৩টি পাতাসহ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানিয়েছে তাজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এর মালিক আব্দুল গণি হাছান বিভিন্ন মাধ্যমে ইউরোপ যেতে আগ্রাহীদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে কুরিয়ার সার্ভিসে জনৈক শফিকুল ইসলামের কাছে প্রেরণ করেন। শফিকুল ইসলাম এ পাপোর্ট ব্যবহার করে কৌশলে ইন্দোনেশিয়ান পাসপোর্ট তৈরি করেন এবং পরবর্তীতে ভিসা প্রাপ্তির পর তাজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস সোমা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে টিকেটের ব্যবস্থা করে। টিকেট প্রাপ্তির পর তাজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরেস অবৈধভাবে বিদেশগামীদের দেশ-বিদেশের এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন, পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন কৌশল শিক্ষা দেয়।
আটককৃতরা আরো জানায়, ৩ মাসের ভ্রমণ ভিসা প্রাপ্তির পর অন্যান্য নথিপত্রসহ আলাদা আলাদা খামে ভরে বিদেশগামীদের ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরে পরবর্তীতে গ্রীস ও আজারবাইজানে প্রেরণ করা হয়। মানব পাচারকারী দলের সদস্যরা বিদেশগামীদের গ্রীসে প্রেরণের ক্ষেত্রে তুরস্ক ও আজারবাইজানকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে। ইন্দোনেশিয়ান পাসপোর্টে মাধ্যমে তুরস্ক ও আজারবাইজানে ভ্রমণ সহজ হওয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা অবৈধ ইন্দোনেশিয়ান পাসপোর্টর ব্যবহার করে।
আটককৃতরা র্যাবের কাছে আরো স্বীকার করে, পাচারকৃত বিদেশগামীরা তুরস্কে পৌঁছানোর পর আব্দুল বাসেত নামের দালাল তুরস্কের এয়ারপোর্ট থেকে তাদের রিসিভ করে। আজারবাইজানে পৌঁছানোর পর দালাল চক্রের এজেন্ট মিলন মিয়া তাদের এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে ও নির্ধারিত হোটেলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সড়ক পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধ ভাবে গ্রীসসহ ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করে। আটক দু’জনকে কতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ দিকে, গত বুধবার দক্ষিণ সুরমায় র্যাবের অপর অভিযানে আটক হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুজব রটনাকারী ফাহিম বখত শিপু (৩০)। আটক ব্যক্তি কদমতলীর স্বর্ণশিখা-৪৩ এর মৃত মোজাম্মিল বখতের পুত্র। র্যাব জানায়, আটককৃত ব্যক্তি একাদশ জাতীয় সংসদ বিরোধী মন্তব্য ও ছবি পোস্ট করে। এছাড়া, দেশের গন্যমান্য ব্যাক্তি বর্গের সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও তাদের ছবি ব্যাঙ্গ করে পোস্ট করে। যা আগামী নির্বাচনে জণগণের মাঝে বিভ্রান্তী ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে ।
আটক ব্যক্তিকে দক্ষিণ সুরমা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া অফিসার মো: মনিরুজ্জামান প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।