সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ। পে- অর্ডার রেখে ফরম পাননি প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :: উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্য সংগঠন ‘কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ’ (কেমুসাস)। সিলেটের এই সাহিত্য সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনকে ঘিরে সকল সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন থেকে এই প্রতিষ্ঠানটিতে নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বিএনপি জামাত-শিবির কর্মীরা একজোট।

আর তাদের শক্তির উৎস সিলেট জেলার ও মহানগরের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা।

আওয়ামী নেতাদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ের ফলে কেমুসাসে জামাত-শিবির নেতাকর্মীদের আনাগোনা ছিলো নির্বিঘ্নে। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চলতি নির্বাচন নিয়েও নতুন চক্রান্তে মেতে উঠেছে এই চক্র।

এমন অভিযোগ জানিয়ে চলতি নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেক প্রার্থী এবং ভোটাররা খেদোক্তি প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ-এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার পেছনে প্রগতিশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সরাসরি যুক্ত থাকলেও কৌশলে জামাত শিবির চক্র প্রতিষ্টানটিকে আজ নিজেদের ব্যক্তিগত কার্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে।

জানা যায়, সিলেট কেন্দ্রিয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ, ৪ ডিসেম্বর মনোনয়ন জমাদান এবং ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই ফরম সংগ্রহ করতে কেমুসাস বরাবরে নির্ধারিত পে-অর্ডার করেন। কিন্তু ৪ ডিসেম্বর মনোনয়ন জমাদানকালে শুরু হয় নতুন নাটকীয়তা।

সিলেট নিউজ টাইমসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জেলা বারের সাধারন সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস তিনি একটি মিটিং এ আছেন এবং এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আরেক নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক, এডভোকেট নিজাম উদ্দিন কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অপর সদস্য ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলকে কয়েকবার মোবাইল কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের অভিযোগ তারা মনোয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গেলে, নির্বাচন কমিশনের সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ।তাদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকার পে-অর্ডার রেখে বলেন, আপনাদের বাড়িতে ফরম পাঠাবেন বলে আশ্বস্থ করেন। নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের এই তথ্য জানিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রবীন সাংবাদিক, জালালাবাদ প্রেসক্লাব এর সভাপতিএবং তুখোর ছড়াকার শাব্বির জালালাবাদি বলেন, মূলত দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে জামাতিকরনের চেষ্টা চলছে । গুটি কয়েকজন নীতিহীন আওয়ামীলীগের নেতার আশ্রয় প্রশ্রয় জামাতি সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

অভিযোগ আছে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও মূলত কেমুসাসে বসেই নির্বিঘ্নে এই চক্র রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত করতো।

মেরুদন্ডহীন নির্বাচন কমিশন আমাদের সাথে প্রতারণা করে, জামাত বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন ।  শাব্বির জালালাবাদী আরোও দাবী করে বলেন, এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভোটার বলেন, জামায়াতের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত অনেকেই এখন কেমুসাসের কার্যকরী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস নেই কারো।

জানাগেছে, কেমুসাসের কার্যকরী সদস্য জাহেদুর রহমান চৌধুরী জামাতের অফিস সেক্রেটারি, কার্যকরী সদস্য মাহবুব ফেরদৌস বায়তুলমাল সম্পাদক,ফজলুল করিম আজাদ হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, ছয়ফুল করিম হায়াত জামায়াতের শিক্ষা বিভাগ সদস্য, মোহিত চৌধুরী,সেলিম আওয়াল সহ অনেকেই জামাত ঘরানার লোক বলে দীর্ঘদিন থেকেই পরিচিত। এদিকে কেমুসাস নির্বাচনে একক প্যানেল দেওয়ার প্রয়াসকে অগতান্ত্রিক উল্লেখ করে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়র প্রত্যাশী বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এই সিদ্ধান্ত পুরোটাই পরিকল্পিত। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশে সকলের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই একটি কার্যকরী কমিটি এখন সকল ভোটারের দাবি। এই দাবিকে অবজ্ঞা করার মানে হলো, সকল ভোটারদের ভোটাধিকার হরণ করা। যার ফল ভালো কিছুর ইঙ্গিত বহন করেনা।

আজীবন সদস্য ও সাবেক কাউন্সিলর আজহার উদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, “কেমুসাস প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমার দাদা শেখ সিকান্দর আলী জড়িত ছিলেন। পরে এর সাথে আমার পিতা সাবেক পৌর কমিশনার ইর্শাদ আলী কেমুসাসে যুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন তড়িগড়ি করে একটি পক্ষকে ক্ষমতায় বসাতে এমন অনৈতিক প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে লোকোচুরি কখনই মেনো নেবোনা। পে-অর্ডার করেছি মনোনয়ন কেনার জন্য। মনোনয়ন জমা নিয়ে প্রকাশ্যে নির্বাচন না হলে আমরা বিকল্প কর্মসূচি গ্রহন করতে বাধ্য হবো ।”

একক প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী বর্তমান কমিটির সহসভাপতি, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আ ন ম শফিকের কাছে এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে, তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *