খেলাধূলা ডেস্ক::
মেলবোর্নের হাসপাতালের বিছানায় সাকিব আল হাসানের ইনজুরি নিয়ে তোলপাড় চলছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে অস্ত্রোপচারের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নিতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এখন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। অবশ্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন না-ও লাগতে পারে। সাকিব ফিরলেই জানা যাবে এ বিষয়ে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসানও চিন্তিত সাকিবের ইনজুরি নিয়ে। মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘গতকাল (সোমবার) আমি সাকিবের সঙ্গে কথা বলেছি। সে বলল, আজ-কালের মধ্যে রিপোর্ট পাবে। সাকিব খেলতে গিয়ে ব্যথা পেলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু সে খেলতে গিয়ে ব্যথা পায়নি। হঠাৎ হাত ফুলে, পুঁজ জমে কীভাবে এত কিছু হলো বুঝতে পারছি না। এটা আমার কাছে এক বিরাট রহস্য! সে আমাকে জানিয়েছে যে ডাক্তার ওকে তিন মাস বিশ্রাম নিতে বলেছেন।’
বোর্ড প্রধান আরও জানিয়েছেন, ‘সাকিব আমাকে বলেছে, সার্জারি করে কোনও লাভ নেই। ইনফেকশন এখন নিয়ন্ত্রণে। তারপরও সাকিব সার্জারি করাতে চায়, ডাক্তাররাও চান। এক্ষেত্রে আমাদের কোনও সমস্যা নেই।’
আগস্টের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে ফিরেই অস্ত্রোপচার করাতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু বোর্ড প্রধানের অনুরোধে এশিয়া কাপে খেলতে রাজি হন তিনি। এ বিষয়ে নাজমুল হাসানের ব্যাখ্যা, ‘আপনারা বলতে পারেন, আমি কেন এশিয়া কাপের পর সার্জারি করার কথা বলেছি? কারণ আমি সেদিনই প্রথম শুনেছি সার্জারির কথা। ডাক্তাররা আমাকে বলেছেন, ৭০ শতাংশ কার্যক্ষমতা থাকলেই চলবে, খেলতে কোনও সমস্যা হবে না। ওর সমস্যা সার্জারি করলেও ঠিক হবে না, কিছু সমস্যা থেকেই যাবে। তবে সেটা খেলার জন্য বাধা নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে-পরে সে আমেরিকায় ছিল। চাইলে তখনই আমরা সার্জারি করিয়ে ফেলতে পারতাম।’
সাকিবের আঙুলের এমন দুরবস্থার জন্য ফিজিও থিহান চন্দ্রমোহনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বোর্ড প্রধান জানালেন, “হজের সময় সাকিব আমাকে বলেছে, ফিজিও তাকে এশিয়া কাপে খেলার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছেন। আপনারা বলতে পারেন, সাকিব যখন বলেছিল এশিয়া কাপের আগেই সে সার্জারি করাতে চায়, তাহলে আমি কেন এশিয়া কাপের পরে সার্জারি করাতে বলেছি? খেলতে গেলে ব্যথা লাগতেই পারে। কিন্তু আমাদের ডাক্তারদের কাছ থেকে কোনও সংকেত না আসা পর্যন্ত ক্রিকেটারদের খেলা বন্ধ করার কোনও সুযোগ নেই। তামিম কি কম ঝুঁকি নিয়েছে? তামিমকে তো আমরা খেলতে বলিনি। সাকিবকে বার বার বলেছি, ‘ডাক্তার দেখাও, যদি সম্ভব হয় তাহলেই খেলো।’ সাকিব নিজেই ঝুঁকি নিয়েছে।”
নাজমুল হাসান আরও জানালেন, “এশিয়া কাপের আগে ব্যাটিংয়ের সময় হাতে জোর পাচ্ছিল না সাকিব। তখন আমি ওকে ফিজিওর সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলাম। সাকিবকে বলেছিলাম, ‘তোমার হাতে কোনও সমস্যা না থাকলে এশিয়া কাপে খেলেই অপারেশনটা করো।’ তখন ও আমাকে বললো যে ফিজিও বলেছে কোনও অসুবিধা নেই।”
দুবাই থেকে দেশে ফিরে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সাকিব জানতে পারেন তার আঙুলে পুঁজ জমে গেছে। দ্রুত পুঁজ বের না করলে মহাবিপদ। বিসিবি সভাপতি নিজেই নাকি তখন সাকিবকে বুঝিয়ে ছুরি-কাঁচির নিচে যেতে রাজি করিয়েছেন, “আমি জানতাম সাকিব আমেরিকায় যাবে, কিন্তু পরে জানলাম সে অ্যাপোলোতে। এরপর আমি ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বললাম। ডাক্তাররা বললেন, ‘পুঁজ বের করতে হবে, কিন্তু সাকিব ভয় পাচ্ছে।’ তখন আমি সাকিবকে বললাম, ‘ওরা তেমন কিছু করবে না, শুধু পুঁজ বের করবে।’ ওকে বোঝালাম পুঁজ বের করা কতটা জরুরি। পুঁজ বের হওয়ার পর সাকিবের আঙুলের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।”