ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বশির পুলিশের খাঁচায় আটক

আজিজুল ইসলাম সজীব:: হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের আলোচিত কৃষক আবুল হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বশির মিয়া (৫০)কে অবশেষে গ্রেফতার করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বশির মিয়া দাউদপুর গ্রামের মৃত আরফান উল্লাহর পুত্র।
আজ দিবাগত রাত ২টার দিকে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মামলার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের কৃষক মোঃ আবুল মিয়ার সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকার মর্তুজ মিয়ার বিরোধ চলছিল।

এই বিরোধের জের ধরে উভয় পক্ষের মাঝে একাধিক মামলা মোকদ্দমা ও ছিল।  ২০০৮ সালের ২১ জুন বিকেলে আবুল মিয়ার জমির ধান খেয়ে ফেলে মর্তুজ আলীর গরু। আবুল মিয়া গরুটি ধরে খোয়াড়ে (আটককৃত স্থানের আঞ্চলিক নাম)দেন। এ নিয়ে মর্তুজ আলী ও আবুল মিয়ার মাঝে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে স্থানীয় মুরব্বীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

কিন্তু পরেরদিনই (২২ জুন) জোয়ালভাঙ্গা হাওরে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দাউদপুর হাকানী খালের ব্রীজের নিকট পৌঁছামাত্র পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে উৎপেতে থাকা আসামীরা আবুল মিয়ার উপর অতর্কিত ভাবে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ফিকল ও শাবুল দিয়ে তাকে মারাত্মক ভাবে রক্তাক্ত জখম করে। তখন তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুত্ব আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হবিগঞ্জ আনার পর তার অবস্থার আশংকাজনক হওয়ার কারণে কর্তব্যরত চিকিংসক তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে প্রেরণ করলে সিলেট যাবার সময় আউশকান্দি তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই ছাদিক মিয়া বাদি হয়ে ২৩ জুন ২০০৮ ইং নবীগঞ্জ থানায় ৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নবীগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি আলী ফরিদ তদন্ত শেষে মরতুজ আলীর স্ত্রী আসামী চম্পা বেগমকে বাদ দিয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৩১ জুন চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলায় ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ২৪ জানুয়ারী ৭ জনের ফাঁসির রায় প্রদান করেন বিচারক মাফরোজা পারভীন।

আদালত সূত্র জানায়, মামলার ৪ আসামী গত ২৪ জানুয়ারি আদালতে হাজিরা দিয়েছিল। কিন্তু রায় ঘোষণার আগ মুহূর্তে রায়ে সাজা হতে পারে এমন আন্দাজ করতে পেরে আসামীরা কাঠগড়ায় না দাঁড়িয়ে পালিয়ে যায়। ওই দিনই আদালত তাদেরকে ফাঁসির আদেশ দেন।

আদালতের রায়ের কিছু দিন পরে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী মর্তুজ আলী, তার পুত্র ফজলু মিয়া, মঈনুল মিয়ার মেয়ে শিফা বেগম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পলাতক থাকেন মরতুজ আলীর ভাই বশির মিয়া, ছেলে ফয়সল মিয়া ও মৃত আফছর মিয়ার ছেলে সুন্দর মিয়া।
এদিকে রাত ২টার দিকে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে বশির মিয়া নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।
এরই প্রেক্ষিতে নবীগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এস.আই মফিদুল হকের নেতৃত্বে এস.আই মাজহারুল ইসলাম, এস.আই ফিরোজসহ একদল পুলিশ সদস্য বশির মিয়ার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *