নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশের মাটিতে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসাকে শূন্যের কোটায় আনতে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে র্যাব-পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাদকবিরোধী অভিযান। অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে অনেকে, বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যাও কম নয়। এতে মাদক ব্যবসা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
দেশ থেকে মাদক নির্মূলে এবার ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি যার যার অবস্থান মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। এরই অংশ হিসেবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের যেকোনো দিন ঢাকাসহ সারাদেশে একযোগে ‘মাদককে না’ বলবে সব মানুষ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মাদকের বিরুদ্ধে ‘হার্ডলাইনে’র পাশাপাশি ‘সফটলাইনের’ কার্যক্রম হিসেবে এই উদ্যোগ। দিন-তারিখ ঠিক না হলেও সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই কর্মসূচি পালিত হবে। এদিন ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাই এক মিনিট দাঁড়িয়ে ‘মাদককে না’ বলবে।
ঢাকায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও ঢাকার বাইরে এই কর্মসূচি সফল করতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে কেবিনেটকে একটি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানাতে। সভায় কর্মসূচির তারিখ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের মধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে সর্ববৃহৎ এই প্রচার অভিযানটি আয়োজন করতে পারবো।
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মাদক নির্মূল অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা অভিযানে গিয়ে তৎক্ষণাৎ আসামিদের সাজা দেবেন। এ ছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ কোর্সে মাদকাসক্তি সম্পর্কে কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মাদকনিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সরকারি-বেসরকারি চাকরি এবং যানবাহন চালানোর লাইসেন্স পেতে মাদকাসক্ত শনাক্তকরণ ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এই টেস্টে উত্তীর্ণরাই কেবল চাকরি এবং লাইসেন্স পেতে পারবেন। এ ছাড়া ব্যাংক-বীমাসহ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এটি পর্যায়ক্রমে প্রয়োগের জন্য স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হবে। বিআরটিএকে ডোপ টেস্ট করে মাদকাসক্তদের লাইসেন্স পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও আকস্মিকভাবে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট করা হবে।
গত মে মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ঘোষণা ছাড়াই পৃথকভাবে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ঘটে একের পর এক ‘বন্দুকযুদ্ধ’র ঘটনা। র্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কমপক্ষে ১৬০ নিহত হলেও নিহতের পরিসংখ্যান জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর।
গত বছর সারাদেশে এক লাখ ৩২ হাজার ৮৮৩ জন মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এক লাখ ছয় হাজার ৫৩৬টি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।