ছাত‌কে পল্লী বিদ্যু‌ৎ ছয় শতা‌ধিক গ্রাহ‌কের ৩০লাখ টাকা নি‌য়ে প‌রিদর্শক উধাও। চলছে অনিয়ম দুর্নিতি।

শংকর দত্ত:: ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ স‌মি‌তির জোনাল অফিসে নতুন মিটার সংযোগের নাম‌ে ছয় শতা‌ধিক গ্রাহক‌কের জামানতকৃত প্রায় ৩০লাখ টাকা নি‌য়ে ওয়া‌রিং প‌রিদর্শক এনামুল হক উধাও এবং  বিএম কর্মকতা জু‌বেদা বেগ‌মের টে‌বিল থে‌কে শতা‌ধিক ফাইল গা‌য়েব করা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে জানা গে‌ছে। গত ১৩ অাগষ্ট, গো‌বিন্দগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ স‌মি‌তির জোনাল অ‌ফি‌সে ওয়ারিং প‌রির্দশক এনামুল হক ছয় শতা‌ধিক গ্রাহ‌কের টাকা ও শতা‌ধিক ফাইল নি‌য়ে নি‌খোঁজ র‌য়ে‌ছেন ব‌লে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গে‌ছে। এ ঘটনায় ছাতক ও সুনামগঞ্জ জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ স‌মি‌তির অ‌ফিস পাড়ায় ব্যাপক তোলপাড় সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে। গ্রাহক‌দের টাকা লুটপা‌টের এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার ওয়া‌রিং প‌রিদর্শক‌ এনামুল হককে প্রাথ‌মিক ভা‌বে  তদন্ত‌ে দুষী প্রমা‌নিত হওয়ায় তা‌কে সাম‌রিক বরখাস্তও করা হ‌য়ে‌ছে ।

জানা যায়, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপ‌জেলা বি‌ভিন্ন গ্রা‌মে নতুন নতুন এলাকায় বিদ্যুৎ সং‌যো‌গের জমা‌নো টাকা ও শতা‌ধিক ফাইল গা‌য়ে‌ব হওয়ার ঘটনাসহ গো‌বিন্দগঞ্জ পল্লী বিদ্যু স‌মি‌তির জোনাল অ‌ফি‌সে দীর্ঘ ‌দিন ধ‌রে চল‌ছে লুটপা‌ট। এ অ‌নিয়ম-দুনী‌তি, ঘুষ-কে‌লেংকা‌রি ও লুটপা‌টের ঘটনা‌টি ধামাচাপা দি‌তে জিএম ব্যাপক অপতৎপরতা চালা‌চ্ছেন ব‌লেও অ‌ভি‌যোগ পাওয়া গে‌ছে । এ অফিসে নিয়ম মেনে আবেদনসহ মিটারের জামানতের ফি পরিশোধ করার দীর্ঘ তিন মাস অ‌তিবাহীত হ‌লেও প্রায় বা‌রো শতাধিক গ্রাহক মিটার পাচ্ছেন না। মিটার প্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা ঘুষ না দেয়ার কারণে এসব আবেদনকারী নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।

এছাড়া বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নগদে পরিশোধের পরও কোনো প্রকার ভাউচার ছাড়া অতিরিক্ত জরিমানা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে এ অ‌ফি‌সে । গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে হাজী আয়বর আলী মার্কেটের তিন ভাই ও মায়ার সাগর সেলুনের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যান পল্লী বিদ্যুৎ লাইনম্যান লিটন ও মাসুক মিয়া। এ সময় গ্রাহকরা তাদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নগদ পরিশোধ করেন। এর পরেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জরিমানা বাবত মিটার প্রতি ২৪০০ টাকা করে আদায় করেন দুনী‌তিবাজ কর্মকর্তা। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ কর‌লেও এখা‌নে কোন রশিদ দেয়া হয়নি গ্রাহক‌কে।

দু‌’টি উপজেলার প্রায় ৫০টি গ্রামে মানুষ নতুন সংযোগের আবেদন ক‌রে‌ছে। এখন মিটারের জন্য তারা অফিসে ঘুরছে কিন্তু মিটার পা‌চ্ছেন না গ্রাহকরা।

গ্রাহক আকমল আলী বলেন, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য গত বছর তিন ডি‌সেম্বর মিটারের জামানতের টাকা পরিশোধ করেছি। কিন্তু অ‌ফিস এখনও মিটার দেয়নি। পল্লী বিদ্যুতের গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মীরা মিটার প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে ঘুষের দা‌বি ক‌রেন।

এসব অভিযোগ করেন লা‌কেশ্বর,‌ বিনন্দপুর, দশঘর, ম‌ল্লিকপুর, রাধানগর, চাকলপাড়া, পীরপুর,‌ নাগাখা‌লি, বি‌লপার,‌ গৌরনগর,‌ গোজারপাড়া, ত‌কিপুর, চানপুর, পৈলনপুর, ও নর‌সিং পুর এলাকার গ্রাহকরা। তারা জানান, তাদের পরে যারা আবেদন করে নগদ ঘুষের টাকা দিয়েছেন তাদের আগে বিদ্যুৎ সংযোগ হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। অ‌ফি‌সের লাইনম্যান মাসুক ও মা‌হির বিরু‌দ্ধে মিটার সং‌যো‌গের না‌মে ফাইল আট‌কি‌য়ে গ্রাহক‌দের কাছ থে‌কে লাখ লাখ টাকা অনিয়ম-দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। গোবিন্দগঞ্জ জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে অন স্পট বিল পরিশোধের পরও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন না‌মে অতিরিক্ত জরিমানা আদায়ও করা হ‌চ্ছে ।

গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নে গৌরনগর ২০টি, দশঘর ১৫০টি, নাগাখা‌লি, রাধানগর, ব‌িনন্দপুর ও লা‌কেশ্বর গ্রা‌মে তিন শতা‌ধিক, দক্ষিণ চাকলপাড়া গ্রামে ৫০টি, পীরপুর পুর্বপাড়া ২৫টি, মল্লিকপুর ৭০টি, দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নে চেগাপাড়া গ্রামে ২৫টি, মায়েকুল গ্রামে ১০০টি, ভাতগাঁও ইউনিয়নের ৫টি গ্রামে প্রায় ১২শ’ গ্রাহক মি‌টার না পে‌য়ে‌ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ বিল আদায় ও সংযোগ প্রদানের নামে দীর্ঘদিন যাবৎ এ অফিসে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি ও লুটপাট হ‌চ্ছে। তাদের লাগামহীন ঘুষ বাণ‌িজ্যের কার‌নে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা।

গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাওঁ ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান জানান, ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ারের বাড়ীর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এভাবে অতিরিক্ত জরিমানার নামে গ্রাহকদের হয়রানিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খুশি করতে তাদের ঘুষ বাণিজ্য অব্যাহত রাখছে। এর প্রতিকার চান তি‌নি।

গ্রাহক হয়রানি ভুগান্তি অনিয়ম
এ সব সত্যতা স্বীকার ক‌রেন স‌মি‌তির চেয়ারম্যান পীর মোহাম্মদ আলী মিলন । ত‌বে তার বিরু‌দ্ধে অ‌া‌নিত অ‌ভি‌যোগ অস্বীকার ক‌রে এসব ঘটনায় তদন্ত ক‌রে জ‌ড়িত‌দের বিরু‌দ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শা‌ন্তির দা‌বি ক‌রেন।

এ‌দি‌কে সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক অফিসের দায়িত্বে থাকা ডিজিএম একে জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম ও ঘুষ অভিযোগ। তিনি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাআঙ্গুল দেখিয়ে ভুয়া সনদপ্রাপ্ত একজন ঠিকাদার দিয়ে অবৈধভাবে কাজ চালাচ্ছেন বলেন অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে ডিজিএম একে জাহিদুল ইসলাম অ‌ফিস থে‌কে শতা‌ধিক ফাইল গা‌য়েব এর ঘটনার সত্যতা স্বীকার ক‌রে তি‌নি জানান, গ্রাহকদের টাকা মে‌রে ওয়া‌রিং পরিদশক এনামুল হক উধাও হ‌য়ে‌গে‌ছে। গ্রাহক হয়রানি, নানা অনিয়মের বিষয় জানতে চাওয়া হ‌লে এসব বিষ‌য়ে কোন উত্তর দিতে নারাজ তি‌নি ।

এ ব্যাপা‌রে সুনামগঞ্জ জেলা পল্লী বিদ্যুৎ স‌মি‌তির জিএম অ‌খিল কুমার সাহা এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার ক‌রে ব‌লেন এঘটনায় থানায় এক‌টি ডায়রী ও তিন সদ‌স্য দি‌য়ে ঘটিত এক‌টি তদন্তটিমের  মাধ্য‌মে গো‌বিন্দগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অ‌ফি‌সে তদন্ত চল‌ছে। এ রি‌পোর্ট লেখা পর্যন্ত গো‌বিন্দগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অ‌ফিস‌ে তিন সদস্য এক‌টি তদন্ত টিম অব্যাহত রে‌খে‌ছেন ।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *