নিউজ ডেস্ক:: রাজনীতি এমনই। খালি চোখে সবসময় সবকিছু দেখা যায় না। পর্দার আড়ালে থাকে ঘটনার ঘনঘটা। অভাবনীয় কিশোর আন্দোলন। সরকারে খানিকটা অস্বস্তি। বিরোধী শিবিরে কিছুটা আশাবাদ। তবে অস্বস্তি কাটিয়ে ফের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীনদের হাতেই। গত এক দশকে একেবারে চেনাদৃশ্য। যদিও আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার নিয়ে একধরনের গ্লোবাল নিন্দা তৈরি হয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন সরকারের মন্ত্রীরা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনায় মুখর।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে একাধিক মন্ত্রী যোগ দিয়েছেন এই সমালোচনায়। সবচেয়ে কঠোর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামালের বিরুদ্ধে। বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এর আগে এস কে সিনহাকে নিয়ে জুডিশিয়াল ক্যুর ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কেন হঠাৎ ড. কামাল হোসেনের এত সমালোচনা?
উদ্যোগ আর তৎপরতা চলছে অনেকদিন ধরেই। নানা জটিলতা। তবে সম্ভবত এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আসতে যাচ্ছে জোট রাজনীতির নয়া সমীকরণটি। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যেতে পারে। আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি সমাবেশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই সমাবেশে ড. কামাল হোসেন ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মনসুরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা যোগ দিতে পারেন।
দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলকেই এই সমাবেশে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের। যদিও শেষ পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি পাওয়া যায় কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিকল্প উপায়ে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। এর আগে গত মাসেও জোট রাজনীতি ঘিরে বেশ কিছু চাপান-উতোর হয়েছে। রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর জোট। আর এ জোটের আত্মপ্রকাশের পরপরই সিপিবি কার্যালয়ে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সিপিবির পক্ষ থেকে অবশ্য একে বর্ণনা করা হয়েছে নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গেও সেসময় বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের।
কিশোর আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জোট রাজনীতির আলোচনা অনেটাই মিইয়ে যায়। তবে এখন আবার নতুন করে সে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জনসভায় অংশ নেয়ার জন্য বিএনপি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, সিপিবিসহ বিভিন্ন দলকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ না জানালেও জনসভায় তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, আমরা যেটি জাতীয় ঐক্য হিসেবে মনে করছি তাতে জামায়াত ছাড়া তাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছি। ২২শে সেপ্টেম্বরই সরকারবিরোধী বৃহৎ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে কি না- এমন প্রশ্নে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘তার আগেও তো হতে পারে। প্রক্রিয়া তো চলছে। একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ- এসব মৌলিক ইস্যুতে আলাপ আলোচনা অনেকদিন ধরেই চলছে। এখন একটি সমাধান হয়তো আসবে।’
তিনি বলেন, ‘সকলেই যার যার অবস্থান থেকে বক্তব্য দিচ্ছে। বাম ফ্রন্ট দিচ্ছে, আমরা দিচ্ছি, বিএনপিও দিচ্ছে। এখন শুধু সরকারকে বলা যে, একটি গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর- এগুলো নতুন কথা না। এগুলো আপনারাও (সরকার) অতীতে বলেছেন। এক সঙ্গে আন্দোলনও করেছেন। এখন কেন এগুলো নষ্ট করবেন?’ সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘জোটের ব্যাপারে আমরা সহমত হয়েই আছি। এখন সরকারের কাছ থেকে কিভাবে দাবিগুলো আদায় করবো সেটাই হলো কথা।’
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে জনসভার জন্য ডিএমপি ও গণপূর্ত অধিদপ্তরে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ আমাদের সাংবিধানিক অধিকারগুলো বাস্তবায়নের জন্যই এই ঐক্য প্রক্রিয়া।
এই প্রক্রিয়ায় আমরা সকল রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানাবো। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরেই বিএনপি, গণফোরাম, বিকল্পধারা, জে এস ডি, নাগরিক ঐক্যসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর জোট গঠন হতে পারে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, একটি সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হতে হবে। এখন সরকার যদি পুলিশ আর আমলা দিয়ে নির্বাচন করে তাহলে তো আর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হলে বিরোধী দলগুলোর ঐক্য নিশ্চিত করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নতুন রাজনৈতিক জোটের এই প্রচেষ্টা অনেকদিন ধরেই চলছে এবং বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এ ব্যাপারে সায় রয়েছে। যদিও জোট গঠন নিয়ে বেশ কিছু জটিলতাও রয়েছে। সম্ভাব্য জোটের নেতাদের ওপর এ নিয়ে চাপ ও প্রলোভন দুটিই আসতে পারে। শুরুতে আসন ভাগাভাগি নিয়েও এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। সম্ভাব্য জোটের নেতা কে হবেন তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও বৃহত্তর জোট প্রশ্নে বিএনপি বড় ধরনের ছাড় দিতে রাজি। মালয়েশিয়া মডেল নিয়েও আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত জোট রাজনীতি কোন দিকে গড়ায় তা শিগগিরই পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।