সিসিক নির্বাচন: আরিফের অপেক্ষা কি আজ ফুরাবে, হাল ছাড়েননি কামরান

মেয়র পদে জয় প্রায় নিশ্চিত। তবু অপেক্ষাতেই আরিফুল হক চৌধুরী। মাত্র ১৬২টি ভোটের ব্যবধানের জন্য আজকের পুননির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় তাকে। ৩০ জুলাই নির্বাচন শেষে নিরাপদ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বিজয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে পারেননি সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী। আজ শনিবার কি আরিফুলের এই অপেক্ষা ফুরাবে?

বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে তাকে? নাকি কামরান? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আজ অন্তত সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।

গত ৩০ জুলাইয়ের নানা অভিযোগের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যান আরিফুল হক চৌধুরী। নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে দুপুরেই হাল ছেড়ে দিয়ে নিজেকে অনেকটা গৃহবন্দি করে ফেলেন। আর বিকেলে নির্বাচন প্রত্যাখানের ঘোষণা দেন। তবে রাতে ভোটগণনায় দেখা যায়- অনেকটা অবিশ্বাস্যভাবে এগিয়ে আছেন আরিফুল হক চৌধুরী। দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়ে পরায় সে রাতে বিজয় নিশ্চিত হতে পারেনি আরিফের। আজ তার নিশ্চিত হওয়ার দিন। ফের সিসিকের মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার দিন। স্থগিত দুটি কেন্দ্রে আজ ভোট হবে।

তবে সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদের জয়-পরাজয় অনেকটা নির্ধারিত হয়েই আছে। বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী এতোটাই এগিয়ে যে- তাকে পরাজিত করা প্রায় অসম্ভব। এটা জানেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও। তবু মাঠ ছাড়ছেন না কামরান। আজ স্থগিত দুই কেন্দ্রে নির্বাচনে অংশ নেবেন কামরান।

৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনের পর কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন কামরান। ১৩ কেন্দ্রে পুনঃভোটের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদনও করেছিলেন। তবে সেই আবেদনে সাড়া মেলেনি। তারপরও আজ গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুনঃনির্বাচনে অংশ নেবেন কামরান।

শুক্রবার টুলটিকর জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে গণসংযোগও করেন কামরান। এ সময় নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ধারাকে বিশ্বাস করে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমি ভোটে অংশ নেব। আশা করছি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হবে।

তিনি বলেন, এই দুটি কেন্দ্রে যে ফলাফলই আসুক আমরা তা মেনে নেব। জয়ী হই কিংবা না হই, সিলেটের মানুষের সুখে-দুঃখে সবসময়ই পাশে থাকবো।

গত ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে ১৩৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২ কেন্দ্রের ভোট গণনায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৯০ হাজার ৪৯৬। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পান ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। ফলে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর চেয়ে ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে আছেন।

ওইদিন কেন্দ্র দখল ও ব্যালটবাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

স্থগিত হওয়া গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ২ হাজার ২২১ জন। আর হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার ২ হাজার ৫৬৬ জন। সব মিলিয়ে এই দুই কেন্দ্রে ভোটের ৪ হাজার ৭৮৭ জন।

দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান স্থগিত দুই কেন্দ্রের ভোটের চেয়ে কম হওয়ায় ওই দুই কেন্দ্রে পুনঃভোটের আয়োজন করা হয়।

এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি শতভাগ আশাবাদী স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্রের ভোটাররা আমাকে আগের মতোই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। জয়ের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত রয়েছি। এই দুটি কেন্দ্রে যাতে ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য নিরাপত্তার বিষয়টি সিলেট নির্বাচন অফিসগুরুত্বসহকারে দেখবে বলে আশা করি।

আরিফুল হক আরও জানান, স্থগিত হওয়া গাজী বুরহানউদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ২২১ ভোটারের মধ্যে মারা গেছেন ৮০ জন ও বিদেশে আছেন ৮০ জন।

এ ছাড়া স্থগিত হওয়া হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মোট ভোটার ২ হাজার ৫৬৬। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮০ জন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছেন আরও ৮০ জন। ওয়ার্ড ছেড়ে চলে গেছেন ২৫-৩০ জন। এসব বিষয় নিয়ে তিনি লিখিতভাবে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে ও ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছেও অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘যদি অভিযোগ না করতাম তাহলে দেখা যেত, মৃত মানুষরাই ভোট দিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ কী করতে পারে তা তারা ৩০ জুলাই দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার সঙ্গে জনগণ থাকায় তারা আমার জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *