আজিজুল ইসলাম সজীব :: হবিগঞ্জজেলার এবং এশিয়ার সবচেয়ে বড় বিখ্যাত অপরূপা এক সুন্দরী তরুণী বর্ষার অভিনব গ্রামের নাম বানিয়াচঙ্গ। আর সেই বিখ্যাত উপজেলার একমাত্র শহীদ মিনারটি দেখার কেউ নেই। জর্জীণ অবস্থায় সারা বছরই অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকে। উল্লিখিত শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ২১ ফেব্রুয়ারি ও শহীদ দিবস এলেই যেন চোখে পড়ে এটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাথা । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দুই একদিন আগে ও পরে ছাড়া বছরের বাকী সময়জুড়েই শহীদ মিনারটি পড়ে থাকে অযত্নে, অবহেলায়। দেখভাল করার জন্য যেন কেউ নেই।
এমন পবিত্রতা রক্ষার্থে যে কোন শহীদ মিনারে জুতা পায়ে দিয়ে প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না কেউই। আর এ সুযোগেই বানিয়াচং শহীদ মিনারটি পরিণত হয়েছে বেকার মানুষদের আড্ডাবাজি এবং প্রেমিক’প্রমিকাদের নিরাপদ অবস্থানে । পাশের জীপ স্ট্যান্ডের ড্রাইভারদেরও অবসরে আড্ডা মেরে সময় কাটাতে দেখা যায় ও অনেক মোটরসাইকেল যাত্রীরা তাদের ব্যবহৃত গাড়িটি শহীদ মিনারের ভিতরে রাখেন।
জানা যায়, সন্ধ্যা নামার পরই মাদক সেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিণত হয় এই পবিত্র শহীদ মিনারটি। শহীদ মিনারটি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় শুধুমাত্র ক্ষোভ প্রকাশই করেছেন ভাষা সৈনিকসহ সাধারণ মানুষ। নেই কোন ঠিক করার কর্যক্রম।
উল্লিখিত দলীয় নানারকম পোস্টার-ব্যানারসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনের পোস্টার সাঁটানো থাকে ওই শহীদ মিনারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনের বেলায় অনেকেই জুতা পড়ে মিনারের বেদিতে হাঁটা-চলা করছেন। পাশাপাশি শহীদ মিনারের ভিতরে এক কবিরাজ বসে নানান রকম ঔষধ বিক্রি করছেন। আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের কর্মসূচি এই শহীদ মিনারেই পালন করে থাকেন। পাশের স্ট্যান্ড থাকায় তাদের জীপ গাড়ি, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল এলোপাথাড়ি করে রাখা হয়েছে। মূল প্রবেশদ্বারের উভয় দিকে আশেপাশের ফার্মেসিতে ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, সুই, ভায়াল, ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরা পড়ে আছে। গেইটের কাছাকাছি পানি জমে বড়ো ধরণের গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলেও চরম ব্যাঘাত ঘটছে।
সারা বছর কোন খোঁজ-খবর না নিলেও ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই কিছুটা কদর বাড়ে বাংলা ভাষার গৌরবময় স্মৃতি বিজড়িত স্থান শহীদ মিনারের। চলে মাজা-ঘষা ও সাজসজ্জার কাজ। তবে কিছু দিন পর থেকেই আবার বেহাল হয়ে পড়ে এই শহীদ মিনারটি। এ দিকে ভাষা শহীদদের সম্মানার্থে শহীদ মিনারের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষায় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতনমহল।
অভিযোগ রয়েছে, শহীদ মিনারের বেদিতে বসে একধরণের উশৃঙ্খল তরুণেরা ধূমপানসহ মাদক সেবন করে।
এখানে উদ্ভট গন্ধে এই মিনারের আশেপাশেও যাওয়া যায়না। শহীদ মিনারের মূল বেদিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে সিগারেটের প্যাকেট ও অসংখ্য উচ্ছিষ্ট অংশ, খড়কুটো ও ময়লা-আবর্জনা। আবার এই শহীদ মিনারের ভিতরে মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে মিনারের পূর্বদিকটা অস্থায়ী প্রস্রাবখানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন খান জানান, ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণেই এ শহীদ মিনার। যদি এর যথাযথ মর্যাদা রক্ষা না হয় তাহলে এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ভাষা আন্দোলনের শহীদদের অপমান করা হবে। এটাকে দেখভাল করা সবার দায়িত্ব। নিজ দায়িত্ববোধ থেকে শহীদ মিনারটি পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বানিয়াচংয়ের ভাষাসৈনিক এড. শওদাকত আলী খান বলেন, শহীদ মিনারটি যেভাবে মর্যাদাহীন হচ্ছে এর চেয়ে বড় দু:খ আর কিছুই হতে পারে না। শুধুমাত্র দিবস এলেই এর কদর বেড়ে যায়। তাই সবসময় যাতে এই শহীদ মিনারটিকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায় সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন খন্দকারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, শহীদ মিনারটি শিগগিরই রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় আনা হবে। তবে শহীদ মিনারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সামাজিক সচেতনতা অধিক জরুরী বলেও মনে করেন তিনি।