ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জে নৌ-পথে পাথর ও বালু লোডিং নিয়ে উত্তেজনা

নিউজ ডেস্ক:: নৌ-পথে বার্জ-কার্গো ও বাল্কহেডে পাথর ও বালু পরিবহন এবং লোডিং-আন লোডিংয়ের স্থান নিয়ে ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আবারো মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে উভয় এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। সুরমা, চেলা ও পিয়ান নদী পথে বার্জ-কার্গো ও বাল্কহেডে পাথর-বালু লোডিং-আন লোডিং ও স্বাভাবিক চলাচলে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ এনে উভয় উপজেলার পাথর ব্যবসায়ীরা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

ফলে পাথর ও বালু ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ী ও পাথর শ্রমিকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীক কেন্দ্র হিসেবে ছাতকের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ পাথর, বালু ও চুনাপাথর ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন।

ক্রমান্বয়ে পাথর ব্যবসার প্রসারতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী পথে বার্জ-কার্গো ও বাল্কহেডে পাথর-বালু লোডিং-আন লোডিংযের স্থান নিয়ে ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। বিষয়টি চরম আকার ধারন করলে ব্যবসায়ী পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে উভয় উপজেলার ব্যবসায়ী, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা নিস্পত্তি উদ্যোগ গ্রহন করেন। ২০১০ সালের ২৮আগষ্ট সিলেট সার্কিট হাউজে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু সৈয়দ মোহাম্মদ হাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে একটি লিখিত ডিড পাশ করা হয়।

এসময় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান, কোম্পনীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বাছির, ছাতক পৌর সভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী, সিলেটের পুলিশ সুপার, ছাতক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোরাম আম্বিয়া মাজকুর পাবেল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী, ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জ ইউএনও, উভয় থানার অফিসার্স ইনচার্জ, মোল্লারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মখন মিয়া, ব্যবসায়ী আবরু মিয়া তালুকদার, ছানাউর রহমান ছানা, হাজী হেলাল উদ্দিন, সামছুদ্দোহা, সাবেক চেয়ারম্যান কালা মিয়া, আব্দুন নূরসহ লোকজন উপস্থিত ছিলেন। কোম্পানীগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত উভয় পক্ষের অভিযোগ প্রত্যাহার সিদ্ধান্ত নিয়ে ডিডে উল্লেখ করা হয়, ছাতকে সুরমা নদীর গোয়ালগাঁও পয়েন্ট অতিক্রম না করে ৩ হাজার ফুটের অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন বার্জ-কার্গো, বাল্কহেড ও বড় নৌকা লোডিং-আন লোডিং করতে পারবে।

এ ব্যাপারে একটি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হয়। সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ডিডে উল্লেখিত স্থান অতিক্রম করে নৌ-পথে পাথর-বালু লোডিং-আন লোডিং করে ব্যবসার ব্যাঘাত সৃষ্টি করে যাচ্ছে। ডিড অমান্য করে দু’চারজন ব্যবসায়ী লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন শ’ শ’ পাথর ও বালু ব্যবসায়ী এবং এর সাথে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়ছেন। ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী জয়নাল চৌধুরী এ ব্যাপারে জানান, সরকারীভাবে ছাতককে নৌ-বন্দর হিসেবে ঘোষনা দিয়ে বন্দরের সকল কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কাজেই নিয়ম অনুযায়ী নৌ-বন্দর এলাকায় লোডিং-আন লোডিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়াও ২০১০ সালের ব্যবসায়ীক ডিড অনুযায়ীও লোড-আন লোডিংয়ের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে ব্যবসার সুবিধার্থে। যারা এসব ভঙ্গ করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের লক্ষে ব্যবসার স্বাভাবিক পরিবশে নষ্ট করছেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানান তিনি। ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামছু মিয়া জানান, কোম্পানীগঞ্জের একটি মহল ব্যবসায়ীক ডিড ও নিয়ম-নীতি অমান্য করে স্বাভাবিক ব্যবসায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ডিড অমান্যকারীরা কেচুটিলা, বিলাজুড় এলাকা দিয়ে বাল্কহেড নিয়ে যাওয়ার সময় ছোট-ছোট নৌকার সাথে ধাক্কা লেগে প্রায় দূর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।

এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদী থেকে বাল্কহেড নৌকায় বালু উত্তোলন ও লোডিংয়ের ফলে ধলাই সেতু মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। ডিড অমান্যকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ছাতক লাইমষ্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্র“প, একতা বালু উত্তোলন সমবায় সমিতি, ইঞ্জিন নৌকা মালিক সমবায় সমিতি, নৌ-পরিবহন মালিক সমবায় সমিতি, লেবার সর্দার সমবায় সমিতি, ও নৌ-সুকানী সমিতির নেতৃবৃন্দও দাবী জানিয়েছেন বলে তিনি জানান।

কমেন্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *